হাসিনা পরিবারের পাঁচ দিবসসহ আট জাতীয় দিবস বাতিল
- অন্তর্বর্তী সরকার শেখ মুজিবকে জাতির পিতা মনে করে না: তথ্য উপদেষ্টা।
- মানুষ জাতির পিতা মানলে ৫ আগস্ট ভাস্কর্য ভেঙে ফেলতো না: ক্রীড়া উপদেষ্টা
লণ্ডন, ১৮ অক্টোবর- ফ্যাসিস্ট হাসিনা পরিবারের পাঁচ দিবসসহ আট জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এসব দিবস উদযাপন/পালন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার এ আদেশ জারি করা হয়েছে। হাসিনা সরকারের করা ৭ মার্চ, ১৫ আগস্টসহ জাতীয় আটটি দিবসের মধ্যে পাঁচটিই শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত। এসব জাতীয় দিবস বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে নতুন জাতীয় দিবস হিসেবে যোগ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ ও গুম-খুন করে এবং গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিলো সে দিবস বাতিল করে নতুন করে গণঅভ্যুত্থান দিবস আসতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। পতিত হাসিনা সরকারের আমলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্টে সাধারণ ছুটি দেওয়া হতো। তবে এ দিবস পালন নিয়ে নানা ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ দীর্ঘ ধরে রয়েছে।
১৬ অক্টোবর, বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বতী সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক মনে করে না। তাহলে আমাদের কোনো জাতির পিতা থাকবে না? প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু কেবল ৫২-তেই শুরু হয়নি, আমাদের ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, ৪৭ ও ৭১-এর লড়াই আছে, ৯০ ও ২৪ আছে। আমাদের অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছেন। তাদের লড়াইয়ের ফলে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তথ্য উপদেষ্টা বলেন, যেসব জাতীয় দিবস বাতিল করা হচ্ছে, সেগুলো চাপিয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ফ্যাসিস্ট আচরণ ছিল সেটা। সরকার মনে করেছে, সেগুলো অগুরুত্বপূর্ণ, তাই বাতিল করা হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নতুন করে দিবস আসতে পারে। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ ও গুম-খুন করে এবং গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল। কাজেই কারা তাকে জাতির পিতা বলল, তারা কোন দিবসকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করল, নতুন বাংলাদেশে সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না। আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে চাচ্ছি। ফলে ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, একটি দেশের জাতির পিতা কে হবে সেটা নির্ধারণ করবে সেই দেশের জনগণ, কোনো ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল না। শেখ মুজিবুর রহমানকে যদি দেশের মানুষ জাতির পিতা মনে করতো তাহলে ৫ আগস্ট বিপ্লবী ছাত্র-জনতা তার ভাস্কর্য ভেঙে ফেলত না। শেখ মুজিব জাতির পিতা নয়, আওয়ামী ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রতীকী মাধ্যম।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সকাল ১১টায় তেজগাঁও তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে আগামী ২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদনের জন্য এই সভায় উত্থাপনের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের তোলা হয়েছে। এ প্রস্তাব বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জাতীয় শোক, শিশু ও ঐতিহাসিক ৭ মার্চসহ আটটি দিবস বাতিল করছে অন্তর্বতী সরকার। গত সেপ্টেম্বর মাসে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সরকার এসব জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম দেশের একটি গণমাধ্যমে বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্টসহ জাতীয় আটটি দিবস বাতিল করতে যাচ্ছে অন্তর্বতী সরকার। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস ও ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস বাতিল হচ্ছে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে উপদেষ্টা পরিষদ এসব জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৭ অক্টোবর তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল, তখন ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। পরে ২০০২ সালে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। আবার ছয় বছর পর ২০০৮ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়। তবে এ দিবস পালন নিয়ে নানা ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবসে সরকারি উৎস থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা যায়। ‘ক’ শ্রেণির দিবসে সরকারি বরাদ্দের পরিমাণ উল্লেখ নেই। কিন্তু ১৫ আগস্টের শোক দিবসে সারা দেশে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যয় মেটাতে গিয়ে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়েছেন। গত ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের নামে কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ছোট ভাই নুরুজ্জামান ওরফে জজ মিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি শিমরাইলের প্রতিটি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিককে ডেকে নিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। একইভাবে গাজীপুর, টঙ্গীসহ সারা দেশে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল।
Share this content:
Post Comment