এক প্রকল্প থেকেই হাসিনার ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ !

  • রূপপুরের নির্মাণ ব্যয় এশিয়ায় সর্বোচ্চ।
  • ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণের বোঝা চাপিয়ে গেছেন হাসিনা।
  • দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কাঁধে গড়ে ৪০০ ডলারের মতো বিদেশি ঋণের বোঝা।

ঢাকা, ১৯ আগস্ট-  গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন। বাংলাদেশে শেষ হয়েছে টানা চার বার ক্ষমতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগের জমানা। দেশে এখন চলছে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর উঠে এসেছে প্রায় ৫০০ কোটি আমেরিকান ডলার (৫৯ হাজার কোটি বাংলা টাকা) আত্মসাৎ করার বিস্ফোরক তথ্য।

সম্প্রতি গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আত্মসাৎ করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রকল্পটির বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। এই প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পরেই বাংলাদেশে তীব্র আলোড়ন। প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের দাবি, রাশিয়ার সরকার এই দুর্নীতিতে জড়িত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা , তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নি তথা ব্রিটিশ সাংসদ টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় ওই টাকার লেনদেন হয়েছে। এতে বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম।

অভিযোগ, ব্রিটেনের রাজনীতিক টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর সাংসদ পদ ব্যবহার করে লেনদেনে অংশ নিয়েছিলেন। নিজের ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক ও তাঁর মা শেখ রেহানা (শেখ হাসিনার বোন) ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য।

গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প আরও জানিয়েছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের সময় সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। সে সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি।

রিপোর্ট বলা হয়, ২০০৯ সালে ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি চালু করেন টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও জুমানা ইনভেস্টমেন্ট নামে একটি কোম্পানি রয়েছে তাদের। অভিযোগ, এই কোম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার করতেন শেখ হাসিনা।

 রূপপুরের নির্মাণ ব্যয় এশিয়ায় সর্বোচ্চ

পাবনার রূপপুরে রাশিয়ার ভিভিইআর ১২০০ প্রযুক্তিতে দুই ইউনিটের নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণব্যয় এশিয়া মহাদেশের অন্য দেশগুলোর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণব্যয়ের তুলনায় বেশি। এমনকি নির্মাণব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জাপান, ফিনল্যান্ড, স্লোভাকিয়া রিপাবলিক, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভারত, এমনকি রাশিয়াকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। রাশিয়ার সরকারি সংস্থা রোসাটম রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন পর্যায়ের চুক্তি (জেনারেল কন্ট্রাক্টসহ) পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণের বোঝা চাপিয়ে গেছেন হাসিনা

স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরের বেশি সময়ে দেদার ঋণ নিয়েছে। এ ঋণের বড় অংশই নেওয়া হয়েছে দেশি উৎস থেকে। এর মধ্যে আবার বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে পাওয়া দেশি-বিদেশি ঋণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পদত্যাগের সময় শেখ হাসিনার সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ঋণ পরিশোধে এখন ব্যবস্থা নিতে হবে। গত ১৫ বছরে অনেক বিদেশি ঋণও নেওয়া হয়েছে। তবে এসব ঋণের বেশির ভাগই নেওয়া হয়েছে দর–কষাকষি ও বাছবিচারহীনভাবে; যা সরকারের দায়দেনা পরিস্থিতিতে চাপ বাড়িয়েছে। সামনে আসছে ঋণ পরিশোধের চাপ। এত অপরিকল্পিত ও প্রায় দর-কষাকষিহীনভাবে বৈদেশিক মুদ্রায় সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট নেওয়া হয়েছে, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাবে।

অর্থ বিভাগ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ঋণের প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। তাতে মোট ঋণের স্থিতি দেখানো হয়েছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ঋণের হিসাব হালনাগাদ করা হয় তিন মাস পরপর। মার্চ ও জুনের হিসাব আরও কিছুদিন পর তৈরি করা হবে। অর্থ বিভাগ ধারণা করছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশি-বিদেশি ঋণ স্থিতি দাঁড়াবে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে দেশি অংশ হবে ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা আর বিদেশি অংশ ৮ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, জুন মাস শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭৯০ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১১৮ টাকা দরে হিসাব করলে তা ৮ লাখ ১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। গত ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল, তা দেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ১৫ বছরে বিদেশি ঋণের বোঝা বেড়েছে তিন গুণের বেশি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পুঞ্জীভূত বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৫ কোটি ডলার। আওয়ামী লীগ সরকার কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পাশাপাশি রেল ও বিদ্যুৎ খাতে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে কঠিন শর্তের ঋণও নেয়। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ গত জুন মাস শেষে সরকারের পুঞ্জীভূত বিদেশি ঋণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ৭৯০ কোটি ডলারে। সে হিসাবে বর্তমানে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মাথার ওপর গড়ে ৪০০ ডলারের মতো বিদেশি ঋণের বোঝা রয়েছে।

Share this content:

Post Comment

অন্যান্য