দেশব্যাপী যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান
- মহানগর ও জেলায় আলাদা সমন্বিত টিম।
- অভিযানের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে বিএনপি।
লণ্ডন, ৪ সেপ্টেম্বর- ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশের অবৈধ ও অনৈতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশকে অস্থিতিশীল করতে ও দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে তার দলের অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা সারা দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। প্রাণ বাঁচাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে থানা থেকে পালিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। এতে সহজেই থানাগুলোতে থাকা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটপাট করে নিয়ে যায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা। এইসব অস্ত্র নিয়ে তারা সারাদেশে ডাকাতি ও লুটতরাজ চালায়। এসব অস্ত্রশস্ত্র দুর্বৃত্তদের হাতে চলে যাওয়ায় ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা তৈরি হয়।
শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে ও পরের তিন দিনে রাজধানীসহ দেশজুড়ে প্রায় পাঁচশ থানায় হামলা হয়। লুটপাট করা হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানাসহ নানা স্থাপনা ও পুলিশের যানবাহন। এসব ঘটনায় পুলিশের প্রায় সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে চালু হতে থাকে সব থানার কার্যক্রম। এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে অবৈধ ও লুট হওয়া অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে লুট হওয়া অস্ত্র জমা দিতে আহ্বান জানানো হয়। তা না হলে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। গত ১৫ বছরে বেসামরিক জনগণকে দেওয়া বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে সরকার। মঙ্গলবারের মধ্যে গুলিসহ এসব আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র জমা দেওয়া সংক্রান্ত জারি করা নির্দেশনার মধ্যে বিভিন্ন থানা থেকে লুটপাট করা অস্ত্র যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈধ অস্ত্রের কথাও। এরপরও তেমন সাড়া না মেলায় লুট হওয়া অস্ত্র এবং অন্যান্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার ৩ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে গেছে সব ধরনের অস্ত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা। ৪ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধারে মাঠে নেমেছে যৌথ বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার, স্থগিত কিন্তু জমা দেওয়া হয়নি এমন অস্ত্র জব্দ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ এর কারবারি ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশেষ করে গণ-আন্দোলনে রূপ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যাদের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে, যারা অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করেছেন এবং যারা অস্ত্র মামলার আসামি তাদের সবাইকে ধরা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কোস্টগার্ড এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব এই অভিযানে অংশগ্রহণ করবে। সব বাহিনী একসঙ্গে সমন্বয় করে সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে দেশব্যাপী স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা। বিশেষ করে, সম্প্রতি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রসমূহের মালিকদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি অস্ত্র হাতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। তাদের গুলিতে অনেক ছাত্র-জনতা হতাহত হন। বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার যেমন হয়েছে, তেমনি দেখা গেছে অবৈধ অস্ত্রের প্রদর্শনী। আন্দোলনকালে এ সংক্রান্ত অনেক ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অস্ত্র উদ্ধার, অবৈধ অস্ত্র কারবারি ও এর অবৈধ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র কারবারি ও অস্ত্র মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সুরমাকে জানিয়েছেন পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর। দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে যৌথ বাহিনীর বিশাল এই অভিযান শুধুমাত্র মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং চিহ্নিত অপরাধীদেরও আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে পরিচালিত হবে।
তবে এই অভিযানের ফলাফল কী হতে পারে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহল এবং নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। এবারের অভিযান ২০০৭ সালের মতো করে চালানো হবে নাকি নতুনত্ব কিছু থাকবে, সেই প্রশ্নও আছে কারও কারও। এই অভিযান শেষ পর্যন্ত ‘বিএনপি দমন’ অভিযানে রুপ নেয় কিনা সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে বিএনপি।
এই অভিযান কতটা সফল হবে এবং এর প্রভাব দেশের স্থিতিশীলতায় কতটা ইতিবাচক হবে, তা আগামী কিছুদিনের মধ্যেই পরিষ্কার হবে। দেশের সাধারণ মানুষের সাথে প্রবাসীরাও এখন চেয়ে আছে যে, এই যৌথ বাহিনীর অভিযান দেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
Share this content:
Post Comment