জাতীয় নির্বাচনে ইসির চোখ

ঢাকা,  ২৮ ফেব্রুয়ারি- ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে আপাতত স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা করছে না কমিশন। আগামী ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা চিন্তায় রেখে অক্টোবরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে ইতোমধ্যে আইন সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। এ ছাড়া নির্বাচনি বিভিন্ন আইনকানুন সংশোধনের প্রস্তুতিও চলছে। নির্বাচনি কেনাকাটার জন্য সরকারের কাছে বারাদ্দ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের কাছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বারদ্দ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাতে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা চেয়েছে কমিশন। এজন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রম, জাতীয় পরিচয়পত্র মুদ্রণ ও বিতরণ, নির্বাচন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ভোটার তালিকা খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৬৯ কোটি ২৫ লাখ ৫ হাজার টাকা।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, জুনের আগে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। কেননা ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটার বাদ দেওয়ার জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ করছে ইসি। এ কাজ শেষ হবে জুনের মধ্যে। ইসি বলছে, স্থানীয় ও জাতীয় দুটি নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব নয়। স্থানীয় নির্বাচন করতে গেলে এক বছর লাগে। এতে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ধাপে ধাপে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব নির্বাচন একইসঙ্গে করা সম্ভব নয়। সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচন আলাদাভাবে ধাপে ধাপে করতে হবে। এ ছাড়া প্রায় আট-নয় শ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপযোগী রয়েছে। সব মিলে এক বছর লাগতে পারে স্থানীয় নির্বাচন শেষ করতে। অন্যদিকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা, রমজান ও বর্ষার কারণে কয়েক মাস নির্বাচন বন্ধ রাখতে হবে। তাই স্থানীয় নির্বাচন নয়, সংসদ নির্বাচনে অগ্রাধিকার দিয়ে সব কাজ করছে কমিশন।

গত সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, আগামী জুনের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আমাদের টার্গেট (লক্ষ্য) ডিসেম্বর এবং জাতীয় নির্বাচন। আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হতে হলে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সিইসি জানান, ভোটার তালিকা তৈরিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি তাঁরা নিচ্ছেন। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের অনেক আবেদন ঝুলে আছে। আইনি জটিলতার কারণে তাঁরা তা নিষ্পত্তি করতে পারছেন না। এ-সংক্রান্ত আইন সংশোধন করার জন্য তাঁরা ইতোমধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন। আরও কিছু বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে নির্বাচন কমিশন। যদি সংস্কার কমিশন গঠন করা না হতো, তা হলেও এটি করতে হতো। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার দরকার বলে কমিশন মনে করে, সেটুকু করার উদ্যোগ তাঁরা নিয়েছেন।

আগামী জুনের মধ্যে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা সম্ভব, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘সংস্কার কমিশন পরামর্শ দিয়েছে জুনে নির্বাচন করা সম্ভব। সেটি সম্ভব হবে যদি ১৬ লাখ মৃত ভোটার বাদ দেওয়া না হয় এবং নতুন ভোটারদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হয়। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম শেষ হবে আগামী জুনে।’ প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী তাঁরা নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান সিইসি।

Share this content:

Post Comment

অন্যান্য