জুলাই-আগস্ট বিপ্লব: পাঠ্যপুস্তকে যে চার প্রবাসীর গল্প অন্তর্ভুক্ত করা উচিত
।। মো: মনিরুজ্জামান ।।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রবাসীদের অবদান নিয়ে দেশের ও প্রবাসের বিভিন্ন কাগজে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব কাগজে যেসব প্রবাসীদের নাম প্রকাশিত হয়েছে তাঁরা বেশিরভাগই প্রবাসী সাংবাদিক। এর বাইরে প্রবাসী কিছু ইউটিউবার, ফেসবুকার ও টকশো হোস্ট তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তালিকায় স্থান না পেয়ে কেউ কেউ নিজেদের কৃতিত্ব নিজেরাই দাবি করেছেন। কেউ কেউ নিজ খোলস পাল্টে নিজেদের জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের সমর্থক বলে দাবি করেছেন। রিয়েল হিরোদের কথা না বলে, রিয়েল হিরোদের বাদ দিয়ে ক্রেডিটখোরগুলা ক্রেডিট টোকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন ফেসবুকে, ইউটিউবে তাদের স্বমৈথুন চলছে। র্যাবও বলছে জুলাই-আগস্টে তারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে থেকেছে। গুম-খুনের রানি শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের সফল ছাত্র-গণজাগরণের কৃতিত্বের অজস্র দাবিদার দেখে আমার জন এফ. কেনেডির সেই বিখ্যাত বাণীটি মনে পড়ছে: Victory has a thousand fathers, but defeat is an orphan. বিজয়ের থাকে সহস্র জনক, কিন্তু পরাজয় হচ্ছে এতিম। সত্যি জুলাই-আগস্ট বিপ্লব সফল না হলে এত এত জনক খুজে পাওয়া যেতো না।
যাই হোক, পত্র-পত্রিকায় এ পর্যন্ত যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে সেই তালিকার সাথে আমি মোটেও একমত না। সাংবাদিকরা, ইউটিউবাররা, ফেসবুকাররা ও টকশো হোস্টরা কিভাবে এই তালিকায় স্থান পান তা আমার মাথায় আসে না। সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা করেছেন। সাংবাদিকদের কাজই তাই। ইউটিউবাররা ভিউ বেশি হয় এমন কন্টেন্টই বেশি বানান। কোন আদর্শ থেকে তারা কোন কন্টেন্ট বানান না। ইউটিউব থেকে আয় করাই থাকে তাদের প্রধান উদ্দেশ্যে। জুলাই-আগস্টেও তারা ভিউ ভিত্তিক কন্টেন্ট বানিয়ে ইউটিউব থেকে আয় করেছেন। টকশো হোস্টরা টকশো হোস্ট করেছেন। যেখানে মূলত অতিথিরা কথা বলেছেন। টকশো হোস্টরা ব্রডকাস্ট সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফেসবুকাররা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার বাইরে আর কী করেছেন? সেদিন দেখলাম ফেসবুকে সাংবাদিক মামুন ইমতিয়াজের শেয়ার করা একটা পোস্টের নিচে আবদুল শাহ নামে একজন পাঠক কমেন্ট করেছেন, ‘ভাই আপনার শেয়ার করা তালিকায় ও ছবিতে যারা আছে, এরা কারা? ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে তাদের কি ভূমিকা ছিলো? টকশো করে এরা সরকার ফেলে দিয়েছে? টকশো করে ইউটিউব থেকে আয় করা ছাড়া জুলাই-আগস্টে এরা কি করেছে? ইউটিউবে টকশো কইরা এরা সরকার ফালায়ে দিছে!? এদের মত এমন টকশো তো আরো অনেকেই করেছে। অনলাইনে টকশোতে পক পক কইরা যে সরকার ফালানো যায়, জীবনে এই প্রথম শুনলাম। হা..হা..হা। মামুন ইমতিয়াজ আপনি কি গান্জা খাইয়া রিপোর্ট করছেন? গুজববাজ ভুট্রো কী করছে? তার তথ্যে কার চুল ফালানো গেছে? ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে তার কি ভূমিকা ছিলো? ভুট্রোর কথা শুইনা মানুষ রাজপথে জীবন দিছে? মুশফিক স্টেট ডিপার্টমেন্ট-বাংলাদেশ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। তাতেই সে প্রবাসী যোদ্ধা হয়ে গেছে? জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতন হইছে। জুলাই-আগস্ট মাসে সে কী করছে? সাকিব-টিটু দুইটাই বাটপার, চাঁদাবাজ। বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে চাঁদাবাজি করতে গিয়া দুইটাই ধরা খাইছে। সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন এদের দুইজনরে নিয়ে আলাদা ভিডিও বানাইছে। এদের বাটপারি, চাঁদাবাজির তথ্য ফাঁস করছে। এদের চাদা চাওয়ার অডিও রেকর্ড ফাঁস করছে, এরা নিজেরা্ও স্বীকার করে সবার কাছে মাফ চাইছে। এখন এরা জুলাই-আগস্টের বিপ্লবী হইয়া গেছে? জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে এরা কী করছে? এরা তো এজ ইউজুয়াল যা করার তাই করছে। টকশো করে ইউটিউব থেকে আয় করা আর চান্দাবাজি, ধান্দাবাজি ছাড়া জুলাই-আগস্টে এরা কী করেছে? মাহমুদুর রহমানের কথাই যদি বলি, দেশে থাকতে উনি একজন যোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু প্রবাসে (তুরস্কে) এসে পিএইচডি করা ছাড়া তিনি আর কী করেছেন? জুলাই-আগস্টে তার কি ভুমিকা ছিলো? কাজী শামীম আহসান, তাসলিমা তাজ, শাহ্ আলম ফারুক, আব্দুল্লাহ ইউসুফ শামীম, আখী সীমা কাওসার- এরা কারা? অনলাইনে আমি ২৪ ঘন্টা থাকি। জীবনেও তো এদের নাম শুনি নাই! এরা কী করছে? নাম একটা দিলেই হলো। পাবলিকরে গাধা মনে করেন আপনারা? যা গিলাইবেন, তাই গিলবো? এত সোজা না। দোহাই লাগে এইসব ফাইজলামি বন্ধ করেন। অনেক ফাইজলামি হইছে। অসংখ্য তরুণ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লব কারো ফাইজলামির বিষয় না। এটাকে আর হাস্যকর বানায়েন না। দেশের বাইরে অসংখ্য প্রবাসী আছে যারা নীরবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে অংশ নিয়েছে। ব্যাপক ভুমিকা রেখেছে। তাদের সন্মান করেন। ওদের কাছে এরা কিছুই না। আপনারা এই হিন্দী চুলের রিপোর্ট করে অসংখ্য শহীদ, অসংখ্য পঙ্গু হাত-পা-চোখ হারানো মাঠের যোদ্ধাদের অপমান করেছেন, ছোট করেছেন। ২৪ এর বিপ্লবকে ছোট করেছেন। আপনাদের ধিক! ইউটিউবাররা, ফেসবুকারদের নায়ক বানিয়ে আপনারা ২৪ এর বিপ্লবকে ছোট করেছেন।’তালিকায় ডা: পিনাকী পিনাকী ভট্টাচার্যের নাম দেখে সাংবাদিক রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমি তিনটি বিষয় সবিনয়ে জানতে চাই। এক- শ্রদ্বেয় পিনাকী দার শাহবাগ আন্দোলনে কি ভৃমিকা ছিল? দুই- বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কি তিনি শেখ হাসিনার নাটক এবং ছাত্রলীগের আন্দোলন বলেছিলেন কি-না? তিন- পিনাকি দাকে কারা জুলাই আগষ্ট বিপ্লবের নায়ক বানিয়েছিল এবং তিনি কি আসলেও নায়ক না মহানায়ক? নাকি ভুল ইতিহাস?’ তালিকায় নিজের নাম দেখে সাংবাদিক তাসনিম খলিল লিখেছেন, ‘ফেসবুকে অনেকগুলো পোস্ট আমার চোখে পড়েছে যেখানে হাসিনাশাহীর পতনের সূত্রে (আরও কয়েকজনের মধ্যে) আমাকে মুক্তিযোদ্ধা, বিপ্লবী ইত্যাদি ইত্যাদি বলা হচ্ছে। পছন্দ বা ভালোবাসা থেকে বলা হলেও এসব লেবেল-তকমা আমার জন্য খুবই বিব্রতকর। আমি একজন সাংবাদিক। পলিটিশিয়ান বা এক্টিভিস্ট নই। সরকার ফেলা বা তোলা আমার কাজ না। আমি আপনাদের ভালোবাসা গ্রহণ করলাম, কিন্তু প্লিজ আমাকে নিয়ে এ ধরনের পোস্ট দিয়েন না।’ সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি লিখেছেন, ‘আমি কোন বিশেষ দলের অনুরাগী বা অনুগত নই, আমার নিজস্ব কোন রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা কিম্বা ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়ার অভিলাষ নেই। সুতরাং আমাকে আপনার রাজনৈতিক মিত্র বা বন্ধু ভাবা ভুল হবে। আমি একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক, এবং যেহেতু বাংলাদেশ কেন্দ্রিক কাজ করছি, এবং আমি নিজে একজন বাংলাদেশি, সে কারণে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা হয় এমন যে কোন কাজের সাথেই আমি সংযুক্ত থাকবো। আপনি কে, কতটা বিত্তবান বা ক্ষমতাবান এতে আমার কিছুই যায় আসেনা। বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার যেন সমুন্নত থাকে, দুর্নীতির কালো থাবা যেন দেশের জনগণকে স্পর্শ করতে না পারে এবং সেনা পরিবারের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সহ সকল নিরাপত্তা সংস্থা যেন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং বিদেশী শক্তির প্রভাব মুক্ত থাকে সে লক্ষ্যেই আমি কাজ করে এসেছি এবং ইনশাল্লাহ করে যাবো।’ তিনি সাংবাদিক সোয়েব কবিরকে চিনিয়ে দিতে লিখেছেন, ‘আফসোস লাগে যখন দেখি এ ধরনের ব্যক্তিরা নিজ খোলস পাল্টে নিজেদের জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের সমর্থক বলে দাবি করে। সোয়েব কবির নামের এই ব্যক্তি সময় টেলিভিশনের ইউকে প্রতিনিধি। বিগত সময়ে স্বৈরাচারের দালালি করেছে এখন ভালো তিনি মানুষ সাজার চেষ্টায় আছেন। অল দা প্রাইম মিনিষ্টারস ম্যান প্রচারিত হওয়ার পর ওই প্রতিবেদনকে তিনি সরকার বিরোধী চক্রান্ত ও প্রোপাগান্ডা রিপোর্ট বলে চালিয়ে দেন এবং লন্ডন থেকে সরকারকে খুশি করতে ভুয়া আরেকটি প্রতিবেদন তৈরি করে বসেন। এবং এই চাটুকারিতার পুরস্কার হিসেবে পরবর্তীতে সোয়েব শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি দেখা করার সুযোগ পায়। তার কাজে খুশি হয়ে শেখ হাসিনা তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদের মাধ্যমে তাকে দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার লাইসেন্সও উপহার দেয়। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দালালির কারণে সময় টিভি থেকে তাকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলো সময় টিভির সৎ সাংবাদিকরা। তবে দালাল সাংবাদিক সোয়েব কবির বসে নেই। এবার ভোল পাল্টে সে হাত করেছে যুক্তরাজ্য বিএনপিকে। যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতাকে দিয়ে সময় টেলিভিশনে ফোন করিয়ে চাকরি বাঁচিয়েছে। সময় টিভি ইউটিউব চ্যানেল থেকে আল জাজিরার বিরুদ্ধে তৈরি করা প্রতিবেদনও ডিলিট করিয়েছে। ১৬ বছর স্বৈরাচারের দালালি করে এ ধরনের চাটারদল এখন ধোঁয়া তুলসি পাতা হওয়ার প্রচেষ্টায় আছে।’
কলাম আর লম্বা করছি না। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে নীরবে অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে চার জন প্রবাসী সবচেয়ে বেশি ভূমিকা নিয়েছেন। এই চারজন হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান; অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলনের আহবায়ক ও ইন্টারনাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জনাব হাসনাত আরিয়ান খান; গ্লোবাল বাংলাদেশি অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটসের আহবায়ক শামসুল আলম লিটন এবং দেশ মুক্তি বিপ্লব মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক ড. কর্ণেল শহীদ উদ্দিন খান। এর মধ্যে জনাব হাসনাত আরিয়ান খান ও জনাব শামসুল আলম লিটনের নাম বিভিন্ন কাগজে এলেও জনাব তারেক রহমান ও জনাব শহীদ উদ্দিন খানের নাম কোন কাগজে আসেনি। এই চারজন স্বৈরাচার পতনের দীর্ঘ লড়াই, আন্দোলন, সংগ্রামে তো ছিলেনই, জুলাই-আগস্ট মাসে তাঁরা আরো বেশি সক্রিয় ছিলেন। প্রবাসে থেকেও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তাঁরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। জনাব তারেক রহমান জুলাই মাসের শুরুতেই ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। এবং তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। তারেক রহমান এই নির্দেশ না দিলে আন্দোলনে বিএনপি অংশ নিতো না। আর বিএনপি অংশ না নিলে আন্দোলন এত দ্রুত বেগবান হতো না। তারেক রহমানের জায়গায় মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হলে ঈদের পরে আন্দোলনের কথা বলে আন্দোলন সেখানেই শেষ করে দিতেন। দেশ মুক্তি বিপ্লব মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক শহীদ উদ্দিন খান জুলাই-আগস্ট মাসে প্রবাস থেকে দেশে বসবাসরত তাঁর অনুসারিদের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর অনুসারিরা আগস্ট বিপ্লবে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন। গ্লোবাল বাংলাদেশি অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটসের আহবায়ক জনাব শামসুল আলম লিটন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও রেব পুলিশের হামলার পর‘বাংলাদেশ সলিডারিটি ক্যাম্পেইন’ শুরু করেন। পূর্ব লণ্ডনের আলতাব আলী পার্কে তিনি সংগঠনের পক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। এছাড়া হাউস অফ কমন্সের গ্র্যান্ড কমিটি হলরুমে তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ‘সমতা ও ন্যায়ের জন্য ছাত্র আন্দোলন’- শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশনের আয়োজন করেন। অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলনের আহবায়ক ও ইন্টারনাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জনাব হাসনাত আরিয়ান খান ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতই ২০২৪ সালেও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে এবং আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে নানান পরামর্শ দেন ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বাংলাদেশের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্র সংগঠনগুলোকে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানানোর আহ্বান জানান। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থায় লিখে তিনি আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া জুলাই মাসের ১ তারিখেই তিনি তাঁর ‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ এর অনুসারীদের আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁর অনুসারীরা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন। অনুসারীদের মাধ্যমে তিনি হল ছেড়ে আসা শিক্ষার্থীদের যাদের ঢাকায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিলো না, তিনি ঢাকায় তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং কারো রক্তের প্রয়োজন হলে রক্তের ব্যবস্থা করেন। শিক্ষার্থীদের বাচাঁতে গিয়ে তাঁর সংগঠনের অসংখ্য কর্মী আহত হন। ২৭ জন কর্মী শহীদ হন। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে উপায়ান্তর না দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে হাসনাত আরিয়ান খান তখন ভারতীয় শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সমর্থনে রাজপথে নামার নির্দেশ দেন। তিনি বাংলাদেশে ভারতীয় হস্তক্ষেপ ও ভারতীয় কূটনীতিকদের একতরফা ও মানহানিকর বক্তব্যেরও কড়া সমালোচনা করে একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করেন। যা ছিলো একটি মাস্টার স্ট্রোক। ফলে বাংলাদেশে শান্তি বাহিনী প্রেরণ করলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ভারতে ছাত্র আন্দোলন হতে পারে ভেবে দিল্লী বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। আর এতে হাসিনার পতন ত্বরান্বিত হয়। বাংলাদেশে ভারতীয় হেজিমনির অবসান হয়। জুলাই-আগস্টে ইন্ডিয়া, নেপালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশের পেছনে তিনি ও তাঁর সংগঠনের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এবং শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে থাকাকালে শেখ হাসিনা কিভাবে যেনো এই তথ্য জেনে যান। এবং ফোনে তাকে রাজাকারের বাচ্চা বলে অকথ্য ভাষায় গালিগা্লাজ করেন। তার সঙ্গে প্রফেসর ইউনুস ও জো বাইডেনকে জড়িয়েও গালিগালাজ করেন। এবং তিনি দেশে গেলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসলে তিনি সবাইকে কঠিন প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেন। শুধু তাই না, শেখ হাসিনা ‘RAW’ এর এজেন্টদের তাঁর পেছেনে লেলিয়ে দেন। গত ১৬ বছর তিনি দেশে যেতে পারেননি। ‘RAW’ এর এজেন্টদের নানান হুমকি-ধমকির কারণে এখনও তিনি দেশে যেতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
যে কারণে আমার এই বর্তমান রচনাটির অবতারণা, তা হলো- স্বৈরাচার আমলের মাধ্যমিকের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর বিতর্কিত সকল বই বাতিল ঘোষণা করেছে অন্তর্বতী সরকার। ২০১২ সালের কারিকুলামের আলোকে পরিমার্জিত/ সংশোধিত বই আসছে। আওয়ামী সিলেবাসের পাঠ্যবই বাতিল করে যুক্ত হচ্ছে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের অধ্যায়, পুলিশের গুলিতে শহীদ আবু সাঈদের নামে একটি নতুন গল্প। থাকবে জুলাইয়ে বিপ্লবের ছবি ও গ্রাফিতি। বাদ দেওয়া হচ্ছে পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা পতিত ফ্যাসিবাদী হাসিনার ছবি ও বয়ান। এ ছাড়াও ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের এই পরিবর্তনের গল্পে প্রবাস থেকে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা এই চার প্রবাসীর গল্প পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করলে ভালো হয়, করা উচিত। তাদের এই আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমের গল্প পড়ে ভবিষ্যতে অনেকেই অনুপ্রাণিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক: মো: মনিরুজ্জামান, এমবিএ (এংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটি); ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কলামিস্ট; আহবায়ক কমিটির সদস্য (অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন), কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ইউকে)।
Share this content:
Post Comment