৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত
- শহিদ পরিবারকে কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি।
- জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসায় আসছে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দল।
লণ্ডন, ২৯ জানুয়ারি: ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতি বছর ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। এ দিনটিকে নতুন করে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি।চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। সম্মতি পাওয়া সাপেক্ষে এবারই প্রথমবারের মতো সারা দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করা হবে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
দেশে আরো একটি গণ-অভ্যুত্থান দিবস জাতীয়ভাবে পালন হয়ে আসছে। প্রতিবছর ২৪ জানুয়ারি পালন করা হয়ে থাকে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক উনসত্তরের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান দিবস। এ দিনটি গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক) গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’সহ ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এটি চূড়ান্ত হলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দেশবাসীকে জানাব ইনশাআল্লাহ।”
জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ সংশোধনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়, যা গত ৬ জানুয়ারি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো হয়। সচিব কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে বিষয়টির অনুমোদন দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে। প্রস্তাবে বলা হয়, সব বৈষম্য নিরসনের জন্য ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার এই ত্যাগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সব পর্যায়ে বৈষম্য দূর করতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পাশে দাঁড়াতে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই অধিদপ্তর কাজ করবে। পাশাপাশি এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার তালিকা সংরক্ষণ, ডেটাবেইস রক্ষণাবেক্ষণ ও তাদের কল্যাণে কাজ করবে। তাদের নামে গেজেট প্রকাশ করবে এবং গণকবর সংরক্ষণ করবে। এ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গবেষণা, নীতিমালা প্রণয়নসহ এসংক্রান্ত কাজ করবে এবং ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উদযাপন করবে। বিস্তারিত আলোচনার পর বিষয়টির অনুমোদন দেয় সচিব কমিটি।
শহিদ পরিবারকে কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ‘শহিদদের’ পরিবারকে এককালীন এক কোটি এবং আহতদের ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করেন পরিবারগুলোর সদস্যরা।
কর্মসূচির মুখপাত্র পরিচয় দিয়ে সেখানে বক্তব্য দেন আমিনুল ইসলাম ইমন। তিনি বলেন, ‘এর আগে আমরা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনসহ দুটো কর্মসূচি পালন করেছি। আজকেও সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচি পালন করছি। আমরা এখানে যারা দাবি-দাওয়া নিয়ে এসেছি প্রত্যেকের পায়ে বেড়ি পরানো আছে, প্রত্যেকেই আহত। আমরা যুদ্ধের ময়দানে সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলাম। যে কারণে আমাদের গুলি লেগেছে আমরা আহত হয়েছি। আমাদের ভাইরা শহিদ হয়েছেন।’
ইমন অভিযোগ করেন, ‘মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মতো আওয়ামী লীগের দালালদের ছত্রছায়ায় থাকা কিছু লোকজন আমার প্রিয় সম্মুখসারির যোদ্ধা আহত ভাইদের ‘আহত লীগ’ বলে এই কর্মসূচিকে অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চষ্টো করছেন। সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমরা এ সরকারেরই একটি অংশ। আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবেন না। আমাদের আহত লীগ বলবেন না। আমাদের যারা আহত লীগ বলবেন তারা নিজেরাই আওয়ামী লীগের দোসরদের মতো আস্তাকুঁড়ে নিক্ষপ্তি হবেন।’
কর্মসূচি থেকে আরও যেসব দাবি তোলা হয় তা হলো আহত ও ‘শহিদদের’ বিষয়ে সরকারের যে কোনো আলোচনা ও সদ্ধিান্ত গ্রহণে তাদের পরিবারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। আহত ও শহিদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। আহতদের রাষ্ট্রীয় খরচে দেশে-বিদেশে সুচিকিত্সা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনে আজীবন চিকিত্সার খরচ বহন করতে হবে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আহত ও ‘শহিদদের’ পরিবারের নিরাপত্তায় সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। আহতদের পুনর্বাসনে গণ-অভ্যুত্থান কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর আসা অন্তর্বর্তী সরকারের গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেল ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানে ‘শহিদ’ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ করে ২১ ডিসেম্বর। সেখানে ৮৫৮ জন শহিদের নামের পাশাপাশি আহতদের তালিকায় ১১ হাজার ৫৫১ জনের নাম ছিল। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর ‘শহিদদের’ পরিবারকে ৫ লাখ এবং আহতদের এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসায় আসছে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দল
জুলাই আন্দোলনে চোখে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্তদের চক্ষু চিকিৎসা সেবা দিতে দেশে আসছে সিঙ্গাপুরের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল৷ আগামী শনিবার ও রোববার বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউট ধানমন্ডি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি অ্যান্ড হসপিটালে এ সেবা প্রদান করা হবে৷
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ আই হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানিয়েছে৷ চিকিৎসক দলে থাকবেন অধ্যাপক ডা. ডোনাল্ড ট্যান টিয়াং হুই, ডা. নিকোল তান ওয়ান হুই, ডা. রোনাল্ড ইয়োহ ল্যাম সুন ও ডা. লিম জিয়াও হং ব্রাঞ্চ। দলটির নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আনোয়ার ও ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী।
গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের চোখ পরীক্ষা করবে চিকিৎসক দলটি। এমনকি প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর জন্যও সুপারিশ করবেন তারা। অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটের হটলাইন নম্বর ১০৬২০-তে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
Share this content:
Post Comment