২০ হাজার কোটি টাকায় ১১ কোটি নাগরিকের তথ্য বিক্রি

  • জয়-পলকসহ ১৯ জনের নামে মামলা।
  • ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়েছেন প্রবাসীরা।

লণ্ডন, ১৪ অক্টোবর- ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রেস ব্রিফিং ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত খবর অনুযায়ী ২০ হাজার কোটি টাকায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত ১১ কোটির বেশি বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ডেটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকাতুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, জয় ও পলক একটি সংগঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নাগরিকদের এনআইডি তথ্য বিক্রির সুবিধা দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিগত তথ্য অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে উন্মুক্ত হয়ে গেছে কতিপয় অসাধু প্রভাবশালী মানুষের ব্যক্তিগত অর্থ লালসার কারণে। এ ঘটনা জাতিকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।  বিশ্ব সম্প্রদায় যখন নিজেদের নাগরিকদের তথ্য ভাণ্ডার সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখার জন্য নানা কর্মকৌশল গ্রহণ করছে, প্রতিনিয়ত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিত করার জন্য নিয়ত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের দেশের কতিপয় লোক নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে দেশ জাতির নিরাপত্তা বিক্রি করে দিচ্ছে এবং এ কাজে রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল সহায়তা পাচ্ছে। কি বিভৎস্য ও ভয়ঙ্কর এই ঘটনা!

২০২২ সালের ৪ অক্টোবর এনআইডি যাচাই সেবা গ্রহণ বিষয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তির অনুচ্ছেদ-২ অনুসারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নির্বাচন কমিশনের তথ্য-উপাত্ত কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিনিময় বা কারও কাছে বিক্রি করতে পারবে না। চুক্তি অনুসারে ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের মিরর কপি তৈরি করে ২০১৯ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলকে দেওয়া করা হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নাগরিকের ব্যাক্তিগত তথ্যের মিরর কপিটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিস লিমিটেড নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটিকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য দেয়। ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি নাগরিকদের ব্যক্তিগত এই তথ্যসমূহ porichoy.gov.bd/ নামক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ১৮০ টিরও বেশি দেশি-বিদেশি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে আসছে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ নির্বচন কমিশন সচিবালয়ে সংরক্ষিত ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংম্বলিত ডাটা সেন্টারটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে প্রজ্ঞাপন দ্বারা স্বীকৃত। আসামীরা বিভিন্ন কোম্পানিসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে পরিকাঠামো থেকে উপাত্ত ভাণ্ডারের (ডাটাব্যাজের) অনুলিপি সংগ্রহ করে স্থানান্তর করে এবং ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক প্রতারণা করে। এ ছাড়াও, তারা ব্যক্তির আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়া ব্যক্তিগত নাগরিক তথ্যাদি অবৈধভাবে সংগ্রহ ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। প্রাথমিকভাবে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারে ২০ হাজার কোটি টাকার ই-ট্রানজেকশনের তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে ১১ কোটির বেশি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন দেশে কর্মরত দেড় কোটির বেশি প্রবাসী, যাদের রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ ও সামাজিক-পারিবারিক অবদান আমাদের দেশটাকে আর্থ-সামাজিকভাবে সবল করে রেখেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশে কর্মরত ও বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক যাদের এনআইডি কার্ড রয়েছে তারা ভীষণ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। অনেকের এনআইডি কার্ডে ছোটখাটো বানান বিভ্রাট ও তথ্যের ভ্রান্তি থাকার অবকাশ আছে। এ কারণে প্রবাসীদের পাসপোর্ট ও ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থান সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এমনিতেই আমাদের আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার নষ্ট করার জন্য প্রতিযোগী কতিপয় দেশ আমাদের নামে দেশে-বিদেশে নানা অপপ্রচার চালায়। আমরাও নানা রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য নিজ দেশকে জঙ্গিবাদের ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থানের কথা বলে বেড়িয়েছি নিজেদের দলীয় রাজনীতির সুবিধা আদায়ের জন্য। এ সবই আমাদেরকে জাতি হিসেবে ঝুঁকির মধ্যে রেখেছে। উপরন্তু কতিপয় মানুষের অতি লোভ ও অসাধুতায় গোটা জাতির নিরাপত্তা আজ ঝুঁকিপূর্ণ, এ অবস্থায় দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারী সকল নাগরিকদের ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেয়া যায় এ ব্যাপারে খাত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

Share this content:

Post Comment

অন্যান্য