হাইকমিশনার হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছেন আবিদা ইসলাম
।। মুহাম্মাদ শরীফুজ্জামান ।।
লণ্ডন, ২৮ জানুয়ারি:: যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্যে বাংলাদেশের অতিরিক্ত ও পূর্ণক্ষমতাপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করে কাজে যোগ দিয়েছেন নবনিযুক্ত হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম।
সোমবার, ২৭ জানুয়ারি তিনি তাঁর নতুন কর্মস্থলে যোগ দিলে হাইকমিশনে কর্মরত অফিসাররা তাঁকে স্বাগত জানান। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তারও আগে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান সরকারের রদবদলের অংশ হিসেবে তিনি সাইদা মুনা তাসনিমের স্থলাভিষিক্ত হলেন। এ নিয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মত যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যুক্ত হলেন। প্রায় ২১ বছর আগে তিনি ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফাস্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা আবিদা ইসলাম কর্মজীবনে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনুবিভাগে কাজ করেছেন। কলকাতা, ব্রাসেলস ও কলম্বোসহ বিভিন্ন বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও আবিদা ইসলাম বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সেমিনার এবং শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
আবিদা ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈদেশিক বিষয় ও বাণিজ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বিবাহিত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জননী। তার পুত্র আরশাদ আহমেদ এবং কন্যা আয়শা আহমেদ।
রাজনৈতিক পালাবদলের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আবিদা ইসলামের সম্পর্ক জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা লেখালেখি হয়েছে। এতে যুক্তরাজ্যে আবিদা ইসলামের হাইকমিশনার হওয়া নিয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছিল। তবে শেষ অবদি সব অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে গেছে।
হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ এর আহবায়ক হাসনাত আরিয়ান খান বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যেস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন কৌশলগত গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিশন। আশাকরি তিনি এর গুরুত্ব অনুধাবন করবেন। যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সাথে ইতিবাচক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি দ্বি-পক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বাস্তবায়নে সদা তৎপর থাকবেন। নিজ দেশের স্বার্থ-রক্ষার জন্য কাজ করবেন। হাইকমিশনের সকল সেবার মান বাড়াবেন। পূর্বসূরী সাইদা মুনা তাসনিমের মত হাইকমিশন থেকে কোন অসত্য তথ্য দিবেন না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবেন না। সিন্ডিকেট করে চলবেন না। তিনি কোন বিশেষ ব্যক্তি, বিশেষ সরকার বা প্রতিবেশি দেশের হাইকমিশনার না; তিনি বাংলাদেশের হাইকমিশনার, কথাটা ভুলে যাবেন না। বিদায়ী হাইকমিশনার নিয়মিত অফিস করতেন না। যুক্তরাজ্যে পড়তে আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কোন সমস্যায় সহায়তার অনুরোধ জানালে রেসপন্স করতেন না। উপরন্তু ফ্যাসিবাদী সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী করিডোর চুক্তি বাতিল, গুম-খুন বন্ধ, জনগণের ভোটাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ইন্ডিয়ান প্রক্সি শাসনের বিরুদ্ধে হাইকমিশনের সামনে বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আমাদের ছবি তুলে এবং ভিডিও ধারণ করে তিনি ঢাকা ও দিল্লিতে পাঠাতেন। ফ্যাসিবাদী সরকারকে তুষ্ট করে তিনি পররাষ্ট্র সচিব হতে চাইতেন। আশাকরি নবনিযুক্ত হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম পূর্বসূরীর এসব বিচ্যুতি থেকে মুক্ত থাকবেন। তিনি এসব পরিহার করে একজন পেশাদার কুটনীতিক হিসেবে সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমি তাঁকে স্বাগত জানাই, শুভকামনা জানাই।’
মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি নবনিযুক্ত হাইকমিশনার প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ‘তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না। একজন পেশাদার কূটনৈতিক হিসেবে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাজ্যেও একজন পেশাদার কূটনৈতিক হিসেবেই তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন।’ এসময় গুম ফেরত সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশাসনে রদবদলের অংশ হিসেবে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এক দাপ্তরিক আদেশে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমকে অবিলম্বে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। সরকারের আদেশের দুই মাসের মাথায় যুক্তরাজ্যে হাইকমিশনের দায়িত্ব ছাড়েন সাইদা মুনা তাসনিম। তার চাকরির মেয়াদ চলতি বছরের ২৬ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
Share this content:
Post Comment