মণিপুরে কি কার্যত রাষ্ট্রপতি শাসন

  • মণিপুর বিধানসভার শেষ অধিবেশন শেষ হয়েছিল গত বছরের ১২ অগস্ট। সংবিধানের ১৭৪ ধারা অনুযায়ী, অন্তত ৬ মাসের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসতেই হবে।
    এন বীরেন সিংহ।

মণিপুর: সাংবিধানিক জটিলতা এড়াতে মণিপুর বিধানসভা সম্ভবত সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশনেই যেতে চলেছে। সম্ভাবনা যে দিকে, তাতে বিধানসভা জিইয়ে রেখে ৩৫৬ ধারা জারি করা হতে পারে। এটি কার্যত রাষ্ট্রপতি শাসন। এই ব্যবস্থায় বিধানসভা ভাঙা হয় না। বিধায়কেরা বেতন পান কিন্তু অধিবেশন বা কমিটির বৈঠক-সহ কার্যকরী কিছু হয় না। যেহেতু সর্বসম্মত ভাবে নতুন মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়া সম্ভব হয়নি, তাই পদত্যাগের পরেও আপাতত এন বীরেন সিংহই থাকছেন তদারককারী মুখ্যমন্ত্রী।

মণিপুর বিধানসভার শেষ অধিবেশন শেষ হয়েছিল গত বছরের ১২ অগস্ট। সংবিধানের ১৭৪ ধারা অনুযায়ী, অন্তত ৬ মাসের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসতেই হবে। কিন্তু সোমবার থেকে অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রবিবার বীরেন পদত্যাগ করায় রাজ্যপাল মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে অধিবেশন বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া আটকাতে ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরের মধ্যে নতুন মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিয়ে দ্বাদশ বিধানসভার সপ্তম অধিবেশন বসাতে হত। কিন্তু মঙ্গলবার উত্তর-পূর্বের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করলেও পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে থাকা মন্ত্রী ওয়াই খেমচাঁদ, স্পিকার টি সত্যব্রত, মন্ত্রী টি বিশ্বজিৎ ও বিধায়ক টি রাধেশ্যামের মধ্যে কাউকেই সর্বসম্মত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া যায়নি। এমনকি বিতর্ক এড়াতে মণিপুরের রাজা তথা রাজ্যসভার সাংসদ সানাজাওবার নামও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পেশ করা হয়। কিন্তু তীব্র কুকি-বিরোধী, সশস্ত্র আরাম্বাই টেঙ্গল বাহিনীর মূল প্রতিষ্ঠাতা ও অতীতে সানামাহি ধর্মের পুনরুজ্জীবন তথা রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা সানাজাওবার হাতে এই সঙ্কটকালে রাজ্যের ভার ছাড়তে মোটেই রাজি নন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অবশ্য খেমচাঁদ বলেন, “নেতৃত্ব নিয়ে হাই কমান্ড যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা মেনে নেব। এখন লক্ষ্য রাজ্যে শান্তি ফেরানো। যুযুধান দুই পক্ষের মধ্যেও শীঘ্রই শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আমার বিশ্বাস।”

রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি কে মেঘচন্দ্র বলেন, বিজেপির উচিত, দ্রুত পরের মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিয়ে বিধানসভা অধিবেশন বসানো। বিধানসভা সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশনে যাওয়া ও রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া মোটেই কাম্য নয়। বিধানসভার অধিবেশন বাতিল করা ও রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র জয়রাম রমেশও। মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ে কুকিদের ১০ বিধায়কের কী ভূমিকা হবে, স্পষ্ট নয়। গত ২১ মাসে তাঁরা কোনও সরকারি কাজে অংশ নেননি। তাঁদের মধ্যে দুই মন্ত্রী-সহ বিজেপির ৭ জন বিধায়ক রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা জানান, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও মুখ্যমন্ত্রী বাছাই নিয়ে তাঁদের বৈঠকে ডাকেননি।

মেইতেইদের যৌথ মঞ্চ কোকোমি কুকিদের যৌথ মঞ্চ আইটিএলএফ ও কোটুর সমালোচনা করে বলেছে, মুখ্যমন্ত্রী যখন বৃহত্তর স্বার্থে পদত্যাগ করেছেন, তখনও, এই সংবেদনশীল পরিবেশে কুকিরা পৃথক প্রশাসন অর্জনের লক্ষ্যে অস্থিরতা বজায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে, যা নিন্দনীয়। অভিযোগ, বৃহত্তর মিজ়োরাম তথা প্রস্তাবিত জ়োল্যান্ড বা জ়ালেঙ্গাম গঠন করে মায়ানমারের সঙ্গে মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গড়াই কুকিদের লক্ষ্য। মিজ়োরামের রাজনৈতিক দলগুলিও মণিপুরের ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছে।

Share this content:

Post Comment

অন্যান্য