পশ্চিমবঙ্গে প্রতীকী গণ-ইস্তফায় ১৫০ চিকিৎসক
কলকাতা: মঙ্গলবার আরজি কর হাসপাতালের ৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসক প্রতীকী গণ-ইস্তফা দিয়েছিলেন। বুধবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৫০ জনে, যা নিয়ে রাজ্যবাসী চিন্তিত হলেও রাজ্য সরকারের কোনো হেলদোল নেই।
ষষ্ঠী তিথির মধ্য দিয়ে বাংলাজুড়ে দুর্গাপূজা শুরু হয়ে গেছে। উৎসবের আমেজ চলবে ১২ অক্টোবর বিজয়া দশমী পর্যন্ত। তবে কলকাতায় চলমান পরিস্থিতিতে পূজার আমেজে গা ভাসাতে খুব একটা রাজি নন বঙ্গবাসী।
বুধবার (৯ অক্টোবর) ষষ্ঠী তিথি। আর এই শারদীয় দুর্গোৎসবের আবহে একদল ইন্টার্ন চিকিৎসক কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় ‘আমরণ অনশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ১০ দফা দাবি যতদিন না রাজ্য সরকার পূরণ করবে ততদিন চলবে এই আমরণ অনশন।
অনশনকারীদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। মঞ্চে মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা হচ্ছে তাদের ব্লাড প্রেসার। প্রতি মুহূর্তে লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে শরীরের গ্লুকোজ লেবেলের। গত শনিবার থেকে ৭ জন ইন্টার্ন চিতিৎসক অনশন করছেন। ফলে সরকার সেদিকে দৃষ্টিপাত না করায় কিছুটা বিব্রত বঙ্গবাসী।
ইন্টার্নদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সিনিয়র চিকিৎসক থেকে সাধারণরা। সবার দাবি, এবার পূজায় আছি কিন্তু উৎসবে নেই। রাজ্যবাসী পাশে দাঁড়ানোয় আরও শক্তিশালী হয়েছে চিকিৎসকদের আন্দোলন। রাজ্যজুড়ে বাড়ছে প্রতীকী গণ-ইস্তফা। এদিন তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আরও একটা দিন সময় দিয়েছেন। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার হয় তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে, না হয় প্রতীকী ইস্তফা ধাপে ধাপে সত্যি হবে বলে হুমকি দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার আরজি কর হাসপাতালের ৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসক প্রতীকী গণইস্তফা দিয়েছিলেন। বুধবার তাতে সম্মতি দিয়ে সংখ্যাটা বেড়েছে। প্রতীকী ইস্তফায় সামিল হয়েছেন কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতল এবং মুখ্যমন্ত্রী বাসভবন লাগোয়া পিজি হাসপাতালের ডাক্তারাও। সব মিলিয়ে বুধবার গণইস্তফা পত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রায় ১৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসক। ধীরে ধীরে সেই আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে জেলাগুলিতেও। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ, মেদিনীপুর জেলার চিকিৎসকরাও গণইস্তফায় স্বাক্ষর করছেন বলে জানা যাচ্ছে।
যদিও প্রতীকী ইস্তফা নিয়ে খুব একটা হেলদোল নেই রাজ্য সরকারের। তবে এর মধ্যেই রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে ডেকে পাঠানো হয়েছিল আরজি করসহ চার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের। রাজ্য সরকারের বক্তব্য গণইস্তফা নিয়ে তাদের কাছে কোনো নথি নেই। অধ্যক্ষদের নবান্নে ডাকা হয়েছিল নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
রাজ্যের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলির সিনিয়র চিকিৎসকরা বাস্তবে যদি সেই পথে হাঁটেন তবে একবারে ভেঙে পড়বে রাজ্য সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা। তবে সিনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তারা এখনই রোগীদের চিকিৎসার পরিষেবা থেকে সরছেন না। সম্ভবত, সেই আশ্বাস পেয়ে গণ-ইস্তফাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার এই নিশ্চুপ থাকাটা হিতে বিপরীত না হয়!
উল্লেখ্য, আরজি করের ঘটনার পর থেকেই নিজেদের সুরক্ষার দাবি জানিয়ে আসছিলেন চিকিৎসকরা। পরে কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। হাসপাতালগুলোর পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের। এরমধ্যে রোগীর স্বজনদের হাতে মারধরের শিকার হন সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ ঘটনার পর থেকে আন্দোলন জোরালো হতে থাকে। বর্তমানে ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেছেন সাত ইন্টার্ন চিকিৎসক।
Share this content:
Post Comment