‘জাহান্নামে বাস করছি’ রাখাইনে ক্ষুধায় কাতর ৫০ হাজার মানুষ
আরাকান নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইনে অনাহারে ভুগছে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। গত মে মাসে জান্তা সেনাদের হত্যাযজ্ঞের পর রাজধানী সিত্তের আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে অর্ধ লক্ষের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। তারা অনাহার ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার মুখোমুখি হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার ব্যাংককভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতী জানিয়েছে, গত মে মাসের শেষের দিকে জান্তা সেনারা বিয়ান ফিউ গ্রামে প্রায় ৮০ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে। এরপর জুলাইয়ের প্রথম দিকে সিত্তের উপকণ্ঠে প্রায় ২০টি গ্রামের বাসিন্দাদের জোরপূর্বক শহরে স্থানান্তরিত করা হয়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বেসামরিকদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।
জান্তা মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন দাবি করেছেন আরাকান আর্মির (এএ) যোদ্ধারা গ্রামবাসীর ছদ্মবেশে গ্রাম থেকে জান্তার অবস্থানে রকেট হামলা চালিয়েছে। সেজন্য গ্রামবাসীদের সাময়িক উচ্ছেদ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জান্তা কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ হওয়া মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে গ্রামবাসীরা সিত্তের ২৬টি মঠে আশ্রয় নিয়েছে। মঠের একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বলেন, ‘তাদের সাহায্য করার জন্য কেউ ছিল না। আমরা সন্ন্যাসীরা যতটা সম্ভব সাহায্য করছি।’
হিজবুল্লাহ কারা ও কতটা শক্তিশালী? হাসান নাসরাল্লাহ কে?হিজবুল্লাহ কারা ও কতটা শক্তিশালী? হাসান নাসরাল্লাহ কে?
একজন বাস্তুচ্যুত গ্রামবাসী বলেন ‘আমরা ক্ষুধার্ত, আমাদের সাহায্যকারী কেউ নেই। আমরা মঠে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
বাস্তুচ্যুত এক নারী বলেন, ‘গ্রাম থেকে কোনো জিনিসপত্র ছাড়াই আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অল্প খাবারেই বেঁচে আছি। কারাবন্দি পরিবারের সদস্যদের নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। তাদের সঙ্গে দেখা করার মতো টাকা আমাদের কাছে নেই। মনে হচ্ছে জাহান্নামে বাস করছি।’
তবে গ্রামবাসীরা মিয়ানমার রেড ক্রস সোসাইটি এবং ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের (এমএসএফ) কাছ থেকে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। যদিও অতিরিক্ত জনাকীর্ণ পরিবেশের কারণে উচ্ছেদ হওয়া গ্রামবাসীদের অনেকে চর্মরোগ ও ডায়রিয়ায় ভুগছেন।
মঠে আশ্রয় নেয়া এক নারী বলেন, ‘এখানে অনেক মানুষ আছে। পুরুষরা মঠে ঘুমায়। নারী ও শিশুরা নিচে। জায়গাটা খুবই সংকীর্ণ, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যরাও অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
এদিকে গণহত্যার পর জান্তা সেনারা বিয়ান ফিউ গ্রামের ৩০০ জনেরও বেশি বাসিন্দাকে আটক করে। এএ’র সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে প্রায় ১০০ জনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়। এছাড়া প্রায় ৩০ জন বয়স্ক বন্দিকে মুক্তি দিলেও বাকি ১৭০ জন জান্তা হেফাজতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত নভেম্বরে অভিযান শুরুর পর থেকে এএ রাখাইনের ১০টি শহর দখল করে নিয়েছে। এর জবাবে জান্তা সেনারা পশ্চিমা রাজ্যটি অবরোধ করে এবং দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। ফলে রাখাইনে সীমিত হয়ে যায় পণ্যের সরবরাহ। এতে ঘাটতির পাশাপাশি পণ্যের মূল্য বেড়েছে।
Share this content:
Post Comment