খায়রুল সংবিধানের গ্যাড়াকলে ইউনুস সরকার

  • রাজনৈতিক মামলা চলবে না, আবার উঠছেও না।
  • প্রশাসন ও পুলিশে লীগ ক্যাডারদের পদায়ন।
  • কারখানা ও সড়কে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা।

লণ্ডন, ১০ সেপ্টেম্বর- ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা সরকারের পলায়নের পরে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তারা খায়রুল হকের সংশোধিত বিদ্যমান সংবিধানের আলোকেই শপথ নিয়েছেন। খায়রুল হকের সংবিধানে অন্তর্বর্তী, মধ্যবর্তী কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিধান না থাকলেও রাষ্ট্রের জরুরি প্রয়োজনে (স্টেট নেসেসিটি) এরকম একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায় বলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞ এমনকি সর্বোচ্চ আদালতও স্বীকৃতি দিয়েছেন। যদিও ভবিষ্যতে কেউ এই সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা প্রশ্ন তুলবেন কি না, তা এখনই বলা কঠিন।

অন্তর্বর্তী সরকার বলে কোনো বিধান যেহেতু সংবিধানে নেই, তাই এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টারা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত শপথবাক্য পাঠ করেছেন। যেমন তারা শপথে বলেছেন: ‘আমি সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি আইন অনুযায়ী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব; আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করিব। (তৃতীয় তফসিল, ১৪৮ অনুচ্ছেদ)।’ তার মানে তারা প্রত্যেকে বিদ্যমান সংবিধান রক্ষারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ববঙ্গের (পূর্ব পাকিস্তান যেটি পরবর্তীতে বাংলাদেশে) বিজয়ী জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা পাকিস্তানের সংবিধানের আলোকে শপথ নেননি। বরং তারা নতুন করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং তার আলোকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সংবিধান লিখেছিলেন। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকার যে সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছেন এবং যে সংবিধান রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ—তারা কী করে এই সংবিধান নতুন করে লেখার কথা বলেন? বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট প্রয়োজন। সাধারণ যুক্তি ও সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে সংবিধান পুনর্লিখন তো দূরে থাক, সংবিধানের একটি শব্দ পরিবর্তনের এখতিয়ারও অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।

অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদেরকে ছাত্র-জনতার বিপ্লবী সরকার বললেও বিপ্লবের আলোকে পুরনো সংবিধান বাতিল না করে খায়রুল হকের সংশোধিত বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে শপথ নেওয়ারফলে গ্যাড়াকলে পড়েছে ইউনুস সরকার। ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে অবিলম্বে শেখ হাসিনার নিয়োজিত ফ্যাসিস্ট মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরানোর দাবি এলেও তারা সেই দাবীপূরণ করতে পারছেন না। 

বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালে প্রণীত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে কাটাছেঁড়া ও সংশোধিত হয়ে আজকের রূপে রয়েছে। আজকে যারা ক্ষমতায় রয়েছেন, তারাও এই সংবিধান রক্ষা করবেন বলে শপথ নিয়েছেন। তবে এটাও সবাই বোঝেন যে, আমাদের সংবিধান আদর্শ কোনো সংবিধান নয়। এটা কোনো ঐশী গ্রন্থ নয়, যাকে পরিত্যাগ করা বা সংশোধন করা যাবে না। পৃথিবীর অনেক দেশেই সময়ের প্রয়োজনে সংবিধান বারবার পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের সংবিধানও বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে একনায়কতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে রাখার জন্য। কাজেই এ সংবিধান যে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য উপযোগী নয়, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

ইউনুস সরকার সংবিধান সংস্কারের জন্য শাহদীন মালিকের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সংবিধান পরিবর্তন হবে কীভাবে? এখনকার সংবিধানকেই কাটাছেঁড়া করে পুনঃলিখন করা হবে, নাকি একেবারেই নতুন করে একটি সংবিধান লেখা হবে? এই সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে সংস্কার করার সুযোগ খুবই কম। সংবিধানের একটি বিরাট অংশজুড়ে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা অপরিবর্তনযোগ্য। এগুলোকে সংবিধানের মূল কাঠামোর অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এগুলোতে হাত দেওয়া যাবে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে ফিরিয়ে আনা জরুরি। একই সঙ্গে বিদ্যমান সরকার রেখেই নির্বাচনের যে সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে, এটাও বিলুপ্ত করা দরকার। আবার সংবিধানের এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা আদৌ কোনোদিন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হয়নি। যেমন সংবিধানের ন্যায়পাল নিয়োগের কথা রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সেই ন্যায়পাল নিয়োগ হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিঃসন্দেহে এ সংবিধানের পরিবর্তন দরকার। সংবিধান কাটাছেঁড়া করে পুনঃলিখনের সুযোগ খুবই কম। তাই নতুন একটি সংবিধান লিখতে হবে যেটা এই মুহূর্তের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। নতুন সংবিধানকে আরও শক্ত ও আঁটসাঁট করে রচনা করতে হবে, যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার বা আইন না মানার পথ রুদ্ধ হয়। সংবিধানের মতো বড় দলিল গণভোটের জন্য উপযোগী নয়। গণভোটের জন্য উপযোগী হলো কোনো একটি আইন বা কোনো একটি বিশেষ চুক্তি। একটি আইন বা চুক্তি গ্রহণযোগ্য কি না, সেটা জনগণের রায়ের জন্য রেফারেন্ডামের আয়োজন করা যেতে পারে। কিন্তু বিরাট কোনো দলিল গণভোটে পাস করানো খুব একটা যৌক্তিক হবে বলে মনে করি না। কারণ মানুষ আইনের সব ধারা বুঝবে না। এমনকি খুবই বিদ্বান ব্যক্তির জন্যও সেটা কঠিন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি ভুল নজির অনুসরণ করা হচ্ছে। যা এই সরকারের ক্ষেত্রে আরো বড় ভুল। এই সরকারের প্রধান রাষ্ট্রের সরকার প্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন। এই পদের ব্যক্তির পদবী প্রধানমন্ত্রী। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব পালন করবেন, কিছুতেই কোনো উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন না। একইভাবে সরকারের অন্য কর্মকর্তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিচালনার গুরু দায়িত্ব পালন করবেন, কাউকে উপদেশ বিতরণ করে বেড়াবেন না। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের পদবী মন্ত্রী হওয়া উচিৎ। মোদ্দা কথা বিপ্লবী সরকারের প্রধানকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যদের মাননীয় মন্ত্রী আখ্যায়িত করা কর্তব্য। কিছুতেই উপদেষ্টা আখ্যায়িত করা ঠিক বা যৌক্তিক হবে না। সরকারের প্রধান যদি উপদেষ্টাই হন তাহলে সরকার চালাবে কে? অন্যরাও যদি উপদেষ্টা হন তাহলে মন্ত্রণালয়গুলো কারা চালাবেন? তাই এই সরকারের প্রধানকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যদের স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বলে আখ্যায়িত করাই সমীচিন।  এ সরকার সংবিধান স্বীকৃত অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ নয়। এর সৃষ্টি হয়েছে গণআকাক্সক্ষার নিরীখে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। এরা বিপ্লব করে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে অবৈধ সরকার উৎখাত করে তার গদি দখল করেছে। তাই এর প্রকৃত নাম হলো ‘বিপ্লবী সরকার’ এবং তার কাজ হলো যে লক্ষ্যে তারা বিপ্লব করেছেন তা বাস্তবায়ন করা। তারা যদি এখন তাদের লক্ষ্য পুননির্ধারণ করেন সেটা অন্য কথা কিন্তু বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনই হবে তাদের আসল কাজ।

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আবারও চলছে জোর আলোচনা। সংগত ও যৌক্তিকভাবে এই ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে কেউ কেউ আইনি প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনও করা হয়েছে। গত ২৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের চেম্বার আদালতের অনুমতি নিয়ে এই আবেদন করা হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি রিভিউ আবেদনটি করেন। রিভিউ আবেদনে বলা হয়েছে, ‘জনগণের রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করা হয়। তাই এটি সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামোতে পরিণত হয়েছে, যা বাতিল করা যায় না।’

রাজনৈতিক মামলা চলবে না, আবার উঠছেও না

রাজনীতি কোনো অপরাধ নয়, এইজন্য রাজনীতিবিদদের নামে রাজনৈতিক মামলা দায়েরের বিধান সরকারের বা রাষ্ট্রের কোনো আইনে নেই। ‘দণ্ডবিধি (পেনাল কোড) বা অন্য কোনো স্পেশাল আইনে বা বাংলাদেশের সংবিধানের কোথাও ‘রাজনৈতিক মামলা’ করার কোনো বিধান নেই। তারপরও বিগত ১৫ বছর রাজনৈতিক মামলার নামে বিরোধী দলের নেতাকরমীদের হয়রানি করা হয়েছে। ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ফৌজদারি মামলার আসামি করে পুলিশ নিজেই বাদী এবং সাক্ষী হয়ে দণ্ড প্রদানের যে প্রক্রিয়া চালু করেছিলো তা ছিলো নজিরবিহীন, বেআইনি এবং সভ্যতাবিরোধী। ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্রের লড়াইয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে বা মামলার বেড়াজালে আবদ্ধ করার মাধ্যমে তাদের দুর্দশাকে চিরস্থায়ী করা হয়েছে। শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের মত লেখক, সাংবাদিকদের জেলে নেয়া হয়েছে। বরতমানে তারা জামিনে থাকলেও সেই সেই মামলাগুলো আজও তাদের মাথার উপর ঝুলছে। সরকার বলছে, তারা কোন রাজনৈতিক মামলা চালাবে না। আবার ঝুলে থাকা মামলাগুলো উঠছেও না। ক্ষমতার পালাবদলে ভবিষ্যতে যেন প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গ্রেফতার, কারাগারে প্রেরণ এবং মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করা না হয়, সব নাগরিকের জন্য সাম্য, আইনের সমতা এবং মানবিক মর্যাদা সুরক্ষার ভিত্তিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়- সেটাই হবে বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রের প্রতি সবার কর্তব্য।

প্রশাসন পুলিশে লীগ ক্যাডারদের পদায়ন

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাসের কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে গিয়ে কয়েকটি বিষয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। বিএনপি নেতারা প্রশাসনে রদবদলে সরকারের একজন উপদেষ্টার কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, ওই উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিচ্ছেন। ওই উপদেষ্টার বিষয়ে কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়গুলো উঠে আসে। গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি অংশ নেন। বৈঠকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন উপদেষ্টার পিএস হিসেবে যাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে তাঁর বিষয়েও আপত্তি তুলেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। ওই সচিব আওয়ামী লীগ সরকারের তিনজন মন্ত্রীর পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে দাবি করেন দলটির নেতারা। এমন ব্যক্তি কিভাবে একটি নির্দলীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার পিএস হতে পারেন, সেই প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনে যে পরিবর্তন আনছে, প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারদের যেসব পদায়ন হয়েছে তাতে ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগতরাই আছেন। এই রদবদল নিরপেক্ষ হয়নি। বরং আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীরা প্রশাসনে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রশাসনের এই রদবদল ছাত্র-জনতার বিপ্লবের বিপরীতমুখী কার্যক্রম।

কারখানা সড়কে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা

পরাজিত, পলাতক ফ্যাসিস্ট শক্তি বাংলাদেশ গঠনের সময়টাকে অস্থির করার চেষ্টা করছে। তাদের হাতে লুটপাটের প্রচুর অর্থ আছে, অবৈধ অস্ত্র আছে। পোশাক কারখানায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা ইসতিয়াক আহম্মেদ হৃদয়কে (২৪) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন গারমেন্টস মালিক সুরমা‘কে বলেন, গত ১৬ বছর বিজিএমইএ-তে ভোটবিহীন আওয়ামী নেতাদের পুনর্বাসন ও লুটপাটের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়েছে। বিজিএমইএ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও মালিক শ্রমিকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে আওয়ামী মন্ত্রী, এমপি ও নিজেদের ঠিকাদারি সুবিধাপ্রাপ্তিতে ব্যস্ত ছিল। সর্বশেষ বিজিএমইএর সভাপতির পদ দখল করে নিয়েছে ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি এস এম মান্নান কচি। অথচ তার নিজের কোনো গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত নেই। সম্প্রতি ছাত্র-জনতার বিপ্লবী আন্দোলনে মিরপুর ও উত্তরায় ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে হত্যা ও দমনে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। শ্রমিকরা বলছেন, এর মধ্যে অপরাজনীতি ঢুকে পড়েছে। যারা আন্দোলন করছে তারা প্রকৃত শ্রমিক নয়। প্রকৃত শ্রমিকরা কখনো নিজ কর্মস্থলের ধ্বংস চায় না। হাসিনার আমলে সুবিধাভোগী শ্রমিক নেতা এবং আওয়ামী লীগের এজেন্টরা গার্মেন্টসে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তারাই পোশাক শিল্পকে অস্থিতিশীল করতে ভাঙচুর চালাচ্ছে। শ্রমিক বিক্ষোভের আড়ালে তারা শিল্পকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। গার্মেন্টস ভাঙচুরে নিরীহ শ্রমিকরা জড়িত নন, বহিরাগতরাই এসব করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে ভারত গভীর ষড়যন্ত্র করছে। হিন্দুত্ববাদী ভারতের পাপেট শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে বাংলাদেশের জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতে একের পর এক ষড়যন্ত্রের কার্ড ছুড়ছেন। ভারতের স্বার্থে হাসিনার এই নীলনকশা বাস্তবায়নে দেশের প্রশাসনের কিছু আমলা, কিছু ব্যবসায়ী নামের দিল্লির এজেন্ট এবং কিছু শ্রমিক-শ্রমিক নেতা নামের হাসিনার পোষা প্রাণী শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ উস্কে দিচ্ছেন এবং পর্দার আড়াল থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশে একের পর এক অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা সরকার কঠোরভাবে দমাতে না পারলে সামনে এই ধারা আরো বাড়তে থাকবে। কারণ প্রতিহিংসাপরায়ণ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকার ও দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। খাল কেটে কুমির আনার মতোই হাসিনা নিজের অনিষ্ট করে হলেও বাংলাদেশের ক্ষতি করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এই খাতে অস্থিরতা কোনোভাবেই দেশের অর্থনীতি ও সংশ্লিষ্ট কারোর জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। ফলশ্রুতিতে আমাদের বাজার দখল করা ভারতের জন্য খুবই সহজ হবে এবং এ থেকে তারাই লাভবান হবে।

Share this content:

Post Comment

অন্যান্য