কলকাতা পুরসভার ১৪১টি ওয়ার্ডে করের পুনর্মূল্যায়ন করতে কমিটি গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

- কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ড হলেও কর পুনর্মূল্যায়নের কাজ হবে ১৪১টি ওয়ার্ডে। কারণ, ২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচনের আগে জোকা ১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে তৈরি করা হয় ১৪২, ১৪৩ এবং ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ড।
অমিত রায়, কলকাতা: কলকাতা পুরসভার ১৪১টি ওয়ার্ডে করের পুনর্মূল্যায়ন করতে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। সম্প্রতি কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের অনুমতি মিলেছে। কলকাতা পুরসভার রাজস্ব বিভাগ মেয়রের অধীন। তাই এ ক্ষেত্রে মেয়রের অনুমতি আবশ্যক ছিল। নিয়মমাফিক মেয়র পারিষদদের বৈঠকেও ওই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়েছে। মূলত পুরসভার রাজস্ব ও কর মূল্যায়ন বিভাগের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি হবে কমিটি। তবে করবৃদ্ধই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নবান্নই।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৪৪টি। কিন্তু কর পুনর্মূল্যায়নের কাজ হবে ১৪১টি ওয়ার্ডে। কারণ, ২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচনের আগে জোকা ১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে তৈরি করা হয় ১৪২, ১৪৩ এবং ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ড। পুরসভার রাজস্ব আদায় বিভাগের বক্তব্য, ওই তিনটি ওয়ার্ডে এখনও পুর পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। এখনও কলকাতা পুরসভার ১ থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ড এবং ১০১ থেকে ১৪১ নম্বরের সংযোজিত এলাকার ওয়ার্ডগুলির মতো পুর পরিষেবা ওই তিনটি ওয়ার্ডে এখনও পুরোপুরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই ওই তিনটি ওয়ার্ডকে কর পুনর্মূল্যায়নের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়েছে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি পুরসভা এক অভ্যন্তরীণ রিপোর্টের ভিত্তিতে জানতে পেরেছে, কয়েক বছর আগে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস লাগোয়া তপসিয়া, ভিআইপি বাজার, মুকুন্দপুর, কালিকাপুর, কসবা, রুবি, নেতাজিনগর, আজাদগড়ের মতো এলাকায় বাজারদর যে পরিমাণ ছিল, এখন তা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থিক স্বচ্ছলতা, পরিকাঠামোগত উন্নয়নের নিরিখেও এই সমস্ত এলাকা মূল কলকাতা শহরের যে কোনও অভিজাত ওয়ার্ডগুলির সমতুল বলেই অভিমত পুরসভার রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকদের। কিন্তু ওই সমস্ত এলাকার হালচাল আমূল বদলে গেলেও বদলায়নি করের হার। তাই এ বার কমিটি গঠন করে করের পুনর্মূল্যায়ন করবে কলকাতা পুরসভা। ২০১৭ সালে শেষ বারের মতো এমন কমিটি তৈরি করে ‘ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট’ পদ্ধতি চালু হয়েছিল। নতুন পদ্ধতি চালু করতে করতে লেগে গিয়েছিল আরও প্রায় দেড়-দু’বছর। এ ক্ষেত্রেও সময় লাগবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কমিটি করের পুনর্মূল্যায়ন করে সেটি প্রস্তাব আকারে নবান্নে পাঠাবে। নবান্নই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
কলকাতা পুরসভার ১ থেকে ১৪১ নম্বর ওয়ার্ড এখন বিভিন্ন ব্লক ও বিভাগে বিভক্ত। মোট সাতটি (‘এ’ থেকে ‘জি’) ব্লক ও ক্যাটিগরি রয়েছে। ওয়ার্ডের আয়তন, এলাকার রাস্তার হাল, পরিকাঠামো, আর্থ-সামাজিক পরিবেশ, জমির বাজারমূল্য ইত্যাদি খতিয়ে দেখে এই ব্লক এবং বিভাগ ঠিক করা হয়। তার পর প্রতিটি বিভাগের জন্য ‘বেস ইউনিট এরিয়া ভ্যালু’ নির্ধারিত হয়। পুরনো ওয়ার্ডগুলির ক্ষেত্রে এই করের পরিমাণ নতুন করে নির্ধারণ করা হবে। পার্ক স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, ভবানীপুর, রাসবিহারী, নিউ আলিপুর এলাকার কোনও কোনও ওয়ার্ডে আগে যে ‘বেস ভ্যালু’ ছিল, তা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে অভিমত পুরসভার রাজস্ব বিভাগের একাংশের।
তবে পুর প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত অন্য একটি অংশ মনে করছে, আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে করের পরিমাণ না-ও বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ, করবৃদ্ধির পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টি কলকাতা পুরসভার হাতে থাকলেও তা কার্যকর করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে দেখা গিয়েছিল, কলকাতার পুরসভার প্রায় ৪৭টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে শাসক তৃণমূল। তাই পুরসভা সম্পত্তির পুনর্মূল্যায়ন করলেও করের পরিমাণ বৃদ্ধি না-ও পেতে পারে বলেই অনেকে মনে করছেন। তবে পুরসভার আধিকারিকদের একাংশের মতে, রাজস্ব এবং কর পুনর্মূল্যায়নের কাজ করতে দেড় থেকে দু’বছর সময় লাগবে। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে করবৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ‘চাপ’ ক্ষমতাসীন দলের ওপর থাকবে না। করের পুনর্মূল্যায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পুরসভা এবং রাজ্য সরকার উভয়েই যথেষ্ট সময় পাবে। কিন্তু বছর দুয়েক আগে ভোট পরিস্থিতি না থাকলেও শহরের পার্কিং ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেও দলের চাপেই মেয়র ফিরহাদকে পিছু হটতে হয়েছিল। এ বার যাতে পুরসভাকে তেমন ‘অস্বস্তি’তে পড়তে না হয়, তাই অনেক আগে থেকেই সাবধানী পদক্ষেপ করতে চান পুরসভার রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকেরা।
Share this content:
Post Comment