আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ।

লন্ডন, ২৮ ফেব্রুয়ারি- রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন সফল করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গেলে প্রধান উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘আসুন এটিকে সাফল্যমণ্ডিত করি এবং সমস্যাটির সমাধান করি। আশা করি এ সম্মেলন থেকে আশানুরূপ কিছু সমাধান বেরিয়ে আসবে।’

কয়েক দশক ধরে চলা মানবিক বিপর্যয়কে বিশ্ব মানচিত্রে ফিরিয়ে আনা এবং দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদের জন্য আরও সহায়তা জোগাড় করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‌‌‘ভ‌বিষ্যতের জন্য একটি পথ তৈরি হওয়া উচিত। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের (রোহিঙ্গা জনগণের) ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা হবে।’

চলতি বছরের শেষের দিকে জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা এই বিষয়টিকে মানচিত্রে তুলে ধরি। জাতিসংঘ সম্মেলন রোহিঙ্গা সংকটকে আবার আলোচনার টেবিলে তুলে ধরার এটি দুর্দান্ত সময়। রাখাইনের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা তৈরির জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’

‘আমরা আপনার সাথে কাজ করতে পেরে আনন্দিত’ মন্তব্য করে তিনি আশা করেন যে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর একটি নতুন গতি তৈরি করবে। মহাসচিবের এই সফরের মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের টেকসই উপায়ও বের হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন করেন ফিলিপ্পো গ্রান্ডি।

বৈঠকে দুজনে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির নতুন দিকনির্দেশনা নিয়ে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য আরও আর্থিক সহায়তা সংগ্রহের উপায়ের ওপর জোর দেন।

আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ

রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয়া মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একটি পথ খুঁজে পাওয়া যায় কিনা? তা নিয়ে ভাবছে সরকার। এমটাই জানিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান।

বৃহস্পতিবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে এক কলোকিয়ামে তিনি বলেন, আমার বেশির ভাগ কাজই প্রকাশ্যে বলার মতো নয়। দ্রুত অনেক ঘটনা ঘটছে এবং পরিস্থিতি প্রতিদিন পরিবর্তিত হচ্ছে। মানুষ মনে করে আরাকান আর্মির সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। এর একটি কারণ হচ্ছে এটি আগে বলা হয়নি। তিনি বলেন, আরাকান আর্মি যখন রাখাইনে শক্তিশালী হচ্ছিল, আমরা বুঝতে পারছিলাম যে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা করতে হবে। আরাকান আর্মি যখন তাদের ফ্ল্যাগ আমাদের সীমান্তে উত্তোলন করলো, সেদিন আমরা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলাম যে এটি নতুন ব্যবস্থা এবং তাদের মোকাবিলা করতে হবে আমাদেরকে। তাদের সঙ্গে আলোচনার আগে আমরা তাদের একটি বার্তা দিতে চেয়েছিলাম। যেহেতু তারা এখন রাখাইন দখল করে আছে, সেজন্য তাদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলতে হবে বলে তিনি জানান।

ড. খলিল বলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনার আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলিয়া বিশপের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়। আমরা জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে আরাকান আর্মির জন্য একটি বিবৃতির খসড়া তৈরি করি। সেখানে বলা ছিল যে আরাকান আর্মিকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে। খলিলুর রহমান বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে জাতিসংঘ মিয়ানমার বিষয়ক দূত, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রধান এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের জন্য বাংলাদেশ সফর কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। এটির পেছনে অনেক কিছু করতে হয়েছে। আরাকান আর্মি রাখাইনের প্রায় ৯০ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। আমি রিপোর্ট পেয়েছি যে সিত্তুয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে এবং সেখানে হামলা হচ্ছে। রাখাইনের মোট জনসংখ্যা হচ্ছে শুধু ঢাকা শহরে যারা বাস করে তাদের ১৬ শতাংশ। আপনারা বুঝতে পারেন যে দুই জায়গার মধ্যে ভারসাম্যে কত দূরত্ব। সেটি আরাকান আর্মিও জানে। কাজেই আমাদের শক্তি প্রদর্শনের প্রয়োজন নেই বলে তিনি জানান। নিজেকে একজন বাস্তববাদী অভিহিত করে ড. খলিল বলেন, সার্বভৌম দেশ হিসেবে যাদের সঙ্গে কাজ করার দরকার, বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে কাজ করবে। তিনি বলেন, আমরা আরাকান আর্মির কাছে পরিষ্কার করেছি যে সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে এবং তারা আমাদের জানিয়েছে— তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে যখন রাখাইন পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ছাড়া রাখাইনের অর্থনৈতিক রুট নেই, ভারতের মধ্য দিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড চলমান রাখা কঠিন। তিনি জানান, রাখাইনের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা খাতে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি হলে সবাই বার্তা পাবে যে রাখাইনে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ তৈরি হয়েছে।

উল্লেখ্য, আরাকান আর্মির সঙ্গে ইন্ডিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ রয়েছে মর্মে আলোচনা আছে। কিন্তু বাংলাদেশের যোগাযোগ আছে কিনা? তা নিয়ে সরকারের তরফে এক ধরণের নীরবতা পালন করা হচ্ছিলো।

Share this content:

Post Comment

অন্যান্য