আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর বর্ণিল আনন্দ শোভাযাত্রায় বর্ষবরণ

- পাহাড়-সমতল, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জাতিগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ!
- ব্যতিক্রমধর্মী ড্রোন শো’তে আকাশে ফুটে উঠল জুলাই গণঅভ্যুত্থান!
- আনন্দ শোভাযাত্রায় প্রধান আকর্ষণ ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’!
- আগে কখনও এমন নববর্ষ দেখেনি রাজধানীবাসী!
- বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় নজর কেড়েছে যেসব মোটিফ।
লন্ডন, ১৫ এপ্রিল: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে যখন মঙ্গল শোভাযাত্রা’র স্থলে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’র ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো, তখনই মানুষের উৎসাহ, আগ্রহ, উত্তেজনা, উদ্দীপনা আর আনন্দ উল্লাসে বোঝা গিয়েছিলো এবার পহেলা বৈশাখের আয়োজন কেমন হতে পারে। গোটা দেশ উৎসবের আনন্দে কতটা মাতোয়ারা হতে পারে।
যা অনুমান করা হয়েছিলো ঠিক তাই। অবশেষে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পহেলা বৈশাখে ব্যাপক আনন্দ-উল্লাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। সোমবার সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে চারুকলা অনুষদ থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়, যা শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়। এবারের বর্ষবরণ ছিলো অন্যান্যবারের চেয়ে একেবারে আলাদা। গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটাই প্রথম বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন। ফলে ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিবাদমুক্ত বর্ষবরণ উৎসবে মাতোয়ারা ছিলো দেশবাসী। এক নতুন চেতনায় বর্ষবরণ আয়োজনের প্রচেষ্টা চলেছে দেশজুড়ে। এবারের আনন্দ শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, কৃষক ও রিকশাচালক প্রতিনিধি, নারী ফুটবলার এবং ২৮টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এত মেলা, এত অনুষ্ঠান, এত আয়োজন, এত আনন্দ, এত উচ্ছ্বাস, এত ভিড়—পাহাড় থেকে সমতলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এমন পয়লা বৈশাখে আমরা কবে দেখেছিলাম! ছোট-বড় প্রতিটা শহরে, প্রতিটা জেলায়-উপজেলায়, ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে, প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে, সংগঠনে সংগঠনে এত উৎসব-আয়োজন ছিল, মানুষের ভিড়েই ‘দমবন্ধ’ হওয়া অবস্থা ছিল বলতে হয়। বাংলাদেশের মানুষ যে উৎসবপ্রিয় জাতি এবং কোনো বিধিনিষেধ বা তর্কবিতর্ক তাদের বেশিদিন আটকিয়ে রাখতে পারে না, তা আবারও যেন সত্য হলো। বিগত ১৫ বছর পর দেশের মানুষ একটা উপযুক্ত সময়ে, উপযুক্ত পরিবেশে ‘প্রাণভরে’ পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সুযোগ পেল। রাজধানীর গুলশান, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডিতেও এবার পার্কে পার্কে স্থানীয় কমিউনিটি যে বর্ণিল ও উদ্দীপনার পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করল, তা অভাবনীয়।
২০২৩ সালের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানুষের মুখ বন্ধ রাখা ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে নিয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিল বাম সংগঠনের কিছু কর্মী। তাঁরা সরকারি মাস্তানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের প্ল্যাকার্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এবারও সরকারের সমালোচনা করে জুলাই গণহত্যা বিচার, ইন্ডিয়ার সঙ্গে অসম চুক্তি বাতিল, শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া, বম জাতিগোষ্ঠীর ওপর অবিচার বন্ধের দাবিতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ ছিল, কোনো বাধা আসেনি। শোভাযাত্রায় নাগরিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল অক্ষুন্ন। জেলখানার বন্দীদের মধ্যে পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে নববর্ষের উদ্যাপন। ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর মানুষ যেন রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি থেকেই বাঁচল—তা এবারের উৎসব আয়োজনেই প্রতীয়মান হলো।
– পাহাড়–সমতল, ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সকল জাতিগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
বাঙালি-অবাঙালির বিচিত্র সব ঐতিহ্যের উপস্থাপন এ দিনের আয়োজনে যেন ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। বাঙালি ছাড়া এই প্রথমবারের মতো পাহাড়–সমতলের আরও ২৭টি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ও তাদের সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা এ শোভাযাত্রাকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছে। শোভাযাত্রায় শহুরে মধ্যবিত্ত ছাড়াও কৃষক, জেলে, তাঁতি, শ্রমিক—নানা পেশার মানুষের উপস্থাপন ঘটানো হয়েছে। কুষ্টিয়া থেকে এসেছিলেন ফকির-বাউলরাও। জেলা-উপজেলায় বা মফস্সলে এমনকি ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসেও গ্রামীণ খেলাধুলা, মেলা ও বিভিন্ন ঐতিহ্য উপস্থাপনের সমাহার ছিল, তা এবারের পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান ছাড়া রাজধানী ঢাকাবাসীর বৈশাখ বরণ যেন জমেই না। এবারও যথারীতি সেই অনুষ্ঠান হলো। পয়লা বৈশাখকে কতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ করা যায়, আগেই তার পরিকল্পনা হাজির করেছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এবার পহেলা বৈশাখের বর্ণিল আয়োজনে বেশ গভীরভাবে উপলব্ধি করা গেল যে, এটি শুধু বাঙালির উৎসব না। বাঙালিসহ পাহাড়-সমতলের সকল জাতিগোষ্ঠীরই উৎসব। জাতি–বর্ণনির্বিশেষে উৎসবে অংশগ্রহণে একাত্ম হয়ে যাওয়ার প্রয়াস দেখা গেল এবার।

– ব্যতিক্রমধর্মী ড্রোন শো’তে আকাশে ফুটে উঠল জুলাই গণঅভ্যুত্থান
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সর্ববৃহৎ ড্রোন শো উপভোগ করেছে লাখো দর্শক। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ড্রোন শোতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জুলাই আন্দোলনের বিভিন্ন মুহূর্ত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, জুলাই আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো, মুগ্ধর পানি বিতরণের আইকনিক দৃশ্যও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া ড্রোন শোতে নতুন বছরের শুভেচ্ছা, পায়রার খাঁচা ভাঙা থিম, ফিলিস্তিনের জন্য প্রার্থনা প্রভৃতি ড্রোন এবং রঙিন আলোর কারুকার্যে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। পহেলা বৈশাখ সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় এ ড্রোন শো আয়োজন করা হয়।
উপস্থিত লাখো দর্শক মুগ্ধ হয়ে দেখেন- ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদ, পানির বোতল হাতে প্রতীকী মুগ্ধ, ‘২৪-এর বীর’, পায়রার খাঁচা ভাঙা, ফিলিস্তিনের জন্য প্রার্থনা প্রভৃতি থিম। এছাড়া জুলাই আন্দোলনের প্রসঙ্গ ও গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার প্রতিবাদও শোতে স্থান পেয়েছে প্রতীকীভাবে। এ ড্রোন শো কেবল বিনোদনের নয়, বরং এটি বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে গণআন্দোলন, মানবিক বিপর্যয় এবং আশা-ভবিষ্যতের ইঙ্গিত।
ড্রোন শোর আগে বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় বৈশাখী কনসার্ট। কনসার্টের শুরুতেই পরিবেশনায় অংশ নেয় বান্দরবানের বেসিক গিটার লার্নিং স্কুল। এরপর গারো ও আরএনআর ব্যান্ড ‘এফ মাইনর’ সংগীত পরিবেশন করে। শিল্পীদের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি। একক সংগীত পরিবেশন করেন মিঠুন চক্র ও পালাকার ইসলামউদ্দিন। রাকিব ও সাগর দেওয়ান পরিবেশন করেন দ্বৈত ও একক সংগীত, আরজ আলী ওস্তাদের সঙ্গে রাকিব পরিবেশন করেন আরও দুটি দ্বৈত গান। আতিয়া আনিশা পরিবেশন করেন ‘চলো নীরালায়’ সহ তিনটি একক সংগীত, আহমেদ হাসান সানি গেয়েছেন ‘মাঝে মাঝে তুমি এলে’, ‘মানুষ কেন এরকম’ ও ‘গল্প না’। শেষে ‘জুলাই আন্দোলন’সহ তিনটি গান পরিবেশন করেন পারশা। অনুষ্ঠানের একদম শেষ পর্যায়ে মঞ্চ মাতায় ‘অ্যাশেজ’ ব্যান্ড।
– আনন্দ শোভাযাত্রায় প্রধান আকর্ষণ ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’
এ বছর প্রধান ৭টি মোটিফের মধ্যে প্রধান আকর্ষণ ছিলো ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। বাংলাদেশে দীর্ঘসময়ের ফ্যাসিবাদী শাসনের চিত্র তুলে ধরতে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফ রাখা হয়েছিলো। বাঁশের বেত-কাঠ দিয়ে মুখাকৃতিটি তৈরির পর গত শনিবার ভোরে এক দুর্বৃত্ত এটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন। পরে ককশিটের ওপর পুনরায় তৈরি করা হয় এটি। এবারের বৈশাখের মূল আকর্ষণ চারুকলা ইনস্টিটিউটের তৈরি “ফ্যাসিস্টের মুখাকৃতির মোটিফ” দেখতে ভিড় করেছেন সাধারণ মানুষ। কেউ তুলছেন ছবি আবার কেউবা করছেন ভিডিও। নেটিজনেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেইসব ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছেন।

– আগে কখনও এমন নববর্ষ দেখেনি রাজধানীবাসী
বাংলাদেশে সবচাইতে বর্ণিল বৈশাখী উৎসব উদযাপিত হয় রাজধানী ঢাকাতে। তবে, গত কয়েকবারের তুলনায় এবারের বৈশাখে রাজধানী সেজেছিলো বর্ণিল সাজে যা আগে কখনও এমনটা দেখা যায়নি। নগরের শাহবাগ মোড়, টিএসসি মোড়, শহিদ মিনার,পলাশী, রমনাসহ আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায় নববর্ষের স্বাদ নিতে অংশগ্রহণ করেছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। সবমিলিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে মানুষ। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে বৈশাখী সাজ। নারীদের বেশির ভাগ শাড়ি পরে এসেছেন। পুরুষদের পরনে পাঞ্জাবি বেশি। শাড়ি–পাঞ্জাবির রঙে লাল-সাদার আধিক্য। শিশু-কিশোরদের পোশাকেও লাল-সাদার প্রাধান্য দেখা গেছে। দেখা যায়, কেউ তার প্রিয়জনের কপালে টিপ পড়িয়ে দিচ্ছেন আবার কেউ কপাল-মাথায় কিংবা হাতে পড়িয়ে দিচ্ছেন বকুল ফুলের মালা আবার কেউবা পড়িয়ে দিচ্ছেন কাঁচের চুড়ি সব মিলিয়ে যেন এক বাঙালিনা সাজ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার গল্প-আড্ডায় মাতছেন রমনার লতা-পাতার গাছগাছালির সবুজ ঘাসে। শাহবাগে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আয়োজনে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পারফর্ম করতে দেখা যায়। কেউ নজরুল সংগীত,কেউ ভাটিয়ালী,দেশত্বাবোধক ও ইসলামিক সংগীত পরিবেশন করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এমন ঐক্য গত ১৬ বছরে দেখেনি কেউ।
– বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় নজর কেড়েছে যেসব মোটিফ
এবারের শোভাযাত্রায় সাতটি বড়, সাতটি মাঝারি ও সাতটি ছোট মোটিফসহ মোট ২১টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। এরমধ্যে অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’, যা শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া সবার নজর কেড়েছে। এই মোটিফের মাধ্যমে বাংলাদেশে দীর্ঘসময়ের ফ্যাসিবাদী শাসনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এবারের শোভাযাত্রায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিফ’ রাখার প্রাথমিক চিন্তা ছিল। তবে পরিবারের অনুরোধে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে প্রশাসন। আবু সাঈদের প্রসারিত দুইহাত না থাকলেও আনন্দ শোভাযাত্রায় স্থান পেয়েছে মুগ্ধের প্রতীকী পানির বোতল। এটি দ্বারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এছাড়া ‘৩৬ জুলাইয়ের’ মোটিভও বানানো হয়েছে। আনন্দ শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এতে ফিলিস্তিনের পতাকা ও প্রতীকী মোটিফ যেমন- তরমুজের ফালি ব্যবহৃত হয়। এই মোটিফের পাশে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়। মাঝারি মোটিফের মধ্যে সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া ও লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস ছিল। এছাড়া ছোট মোটিফগুলোর মধ্যে ছিল ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, বাঘের মাথা, পলো, মাছের চাই, মাথাল, লাঙল এবং মাছের ডুলা। এবারের শোভাযাত্রায় বিশেষ স্থান করে নিয়েছে বাংলার প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পটচিত্র। পট বা বস্ত্রের ওপর এই লোকচিত্র আঁকা হয়। চারুকলায় এবার ১০০ ফুট দীর্ঘ লোকজ চিত্রাবলির পটচিত্র আঁকা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের ১৮টি ইন্ডিয়ান হরিয়ানা ঘোড়া শোভাযাত্রায় আনা হয়েছিল। পটচিত্রে আকবর, বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ১৯৫২ ও ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদ, বেহুলা লখিন্দর, বনবিবি এবং গাজীরপট আঁকা হয়েছে। প্রত্যেকটি চিত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বাঘ এবং বাঘের রং। এছাড়াও, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকার নজির রেখে তৈরি হয়েছে শান্তির প্রতীক পায়রার মোটিফ।
নতুন বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে যাবতীয় তর্কবিতর্ক ছাপিয়ে গিয়ে এমন অংশগ্রহণমূলক, সৌহার্দ্যপূর্ণ, উদ্যাপনমুখর ও স্বতঃস্ফূর্ত উৎসব আয়োজনই হোক সামনের দিনগুলোতেও।
Share this content:
Post Comment