শিরীন শারমিনের সম্পদ বিলাস

  • ৫ ফ্ল্যাটের পরও ১০ কাঠার প্লট

লণ্ডন, ১৮ সেপ্টেম্বর- রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে পাঁচটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাটের অর্ধেক মালিকানা থাকার পরও প্রভাব খাটিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ১০ কাঠা আয়তনের একটি প্লট নিয়েছেন সদ্য পদত্যাগ করা স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ২০২২ সালে বিশেষ কোটায় (১৩/এ ধারায়) প্লটটি বরাদ্দ নিয়েছেন। প্লটের মূল্য বাবদ ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৫৪৪ টাকা পরিশোধ করলেও এর বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। রাজউক থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শিরীন শারমিন চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হন। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা দাখিল করেছেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, প্রতি বছর বাড়িভাড়া বাবদ ৪৪ লাখ ২৫ হাজার, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার, পেশা থেকে ২৪ লাখ ৮৪ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে ৯১ হাজার টাকাসহ ৭৩ লাখ ২১ হাজার ৭১০ টাকা আয় করেন।

হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের বিষয়ে বলেন, তার হাতে ২৭ লাখ ৭২ হাজার ও স্বামীর নামে ১০ লাখ ৭৯ হাজার, বৈদেশিক মুদ্রা ৬ লাখ ৩০ হাজার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৭৭ লাখ ৯৩ হাজার এবং স্বামীর নামে ৭ লাখ ১৩ হাজার, পোস্টাল ও সেভিংস ১ কোটি ১০ লাখ ২১ হাজার এবং স্বামীর নামে ২১ লাখ ৭৫ হাজার, নিজের নামে দুটি গাড়ি, ৩ লাখ ৪০ হাজার স্বর্ণালংকার ও স্বামীর ৩০ তোলা স্বর্ণ, ১ লাখ ১০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিকসসামগ্রী এবং ২ লাখ ৯০ হাজার টাকার আসবাবপত্রসহ ৩ কোটি ২২ লাখ ৭১ হাজার ৬১০ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।

শিরীন শারমিন চৌধুরী হলফনামায় উল্লেখ করেন, তার ঢাকায় পাঁচটি বাড়ি/ফ্ল্যাট রয়েছে। যার ঠিকানা হচ্ছে বনানী এ-ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ১০৭ নম্বর বাড়ি। এ ছাড়া তিনি ধানম-ি আবাসিক এলাকার ১৬ নম্বর সড়কের ৫২ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশ মালিক। উত্তরাধিকার সূত্রে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন।

জানা গেছে, অভিজাত এলাকায় বাড়ি/ফ্ল্যাট থাকার পর শিরীন শারমিন ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রাজউকের একটি প্লট বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেন। তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘অদ্যাবধি রাজউক বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থা থেকে কোনো বাড়ি বা জমি বরাদ্দ পাইনি। সদয় বিবেচনার অধীন আমাকে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে একটি প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হলে বাধিত থাকব।’ প্রধানমন্ত্রী ওই আবেদন অনুমোদন দেওয়ার পর সেটি গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাজউক চেয়ারম্যানের দপ্তরে যায়। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিষয়টি ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজউকের ৪/২০২২তম বোর্ডসভায় উপস্থাপন করা হয়। রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ডসভায় সদস্য হিসেবে রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মো. শফি উল হক, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মুনির হোসেন খান, সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব.) ইঞ্জিনিয়ার সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) কাজী ওয়াছি উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। সভায় আলোচনার ভিত্তিতে শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ১০ কাঠা আয়তনের একটি প্লট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য এস্টেট ও ভূমি-২ শাখার পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ২০২২ সালের ৭ জুন তাকে পূর্বাচল প্রকল্পের ২৬ নম্বর সেক্টরের ২০১ নম্বর সড়কের ২৮ নম্বর প্লটটি চূড়ান্ত বরাদ্দ দেয় রাজউক। তিনি প্লটের মূল্য হিসেবে ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৫৪৪ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু প্লটের বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।

রাজউকের প্রকল্পে যাদের আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে, তারাই প্লট বেশি পেয়েছেন। আর বিশেষ কোটায় প্লট পেয়েছেন এমপি-মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সরকারি চাকরিজীবীরা। যাদের বাড়ি-গাড়ি আছে, তাদেরই প্লট দেওয়া হয়েছে। এক কথায় যাদের প্রয়োজন নেই, তাদের দেওয়া হয়েছে। এসব প্লট বরাদ্দের মাধ্যমে ধনীদের আরও ধনী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’

Share this content:

Post Comment

অন্যান্য