বকেয়া নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধ

পশ্চিমবঙ্গ ডেস্ক: বাংলার বাড়ি (গ্রামীণ) প্রকল্পে আগামী অর্থবর্ষে ১৬ লক্ষ বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাজ্য সরকার। এর জন্য ৯৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বাজেটে। পথশ্রী প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে ১৫০০ কোটি টাকা।
রাজ্য বাজেটে গ্রামীণ বাড়ি এবং রাস্তার জন্য আরও বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে। এই দুই ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত রয়েছে রাজ্যের।
আবাস এবং গ্রাম সড়ক, উভয় প্রকল্পেই বকেয়া টাকা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত রয়েছে রাজ্যের। এ বারের রাজ্য বাজেটে উভয় খাতেই আরও অর্থ বরাদ্দ করল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বাংলার বাড়ি (গ্রামীণ) প্রকল্পে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে আরও ১৬ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হবে। এর জন্য আরও ৯৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে রাজ্য বাজেটে। গ্রামীণ সড়কের জন্য রাজ্য সরকারের পথশ্রী প্রকল্পে তিন দফায় ইতিমধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আগামী অর্থবর্ষে পথশ্রী প্রকল্পের জন্য আরও ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
রাজ্যের বাজেট পুস্তিকায় বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষের পর থেকে পাকা বাড়ি তৈরির প্রকল্পে ‘অন্যায় ভাবে’ আর্থিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলার বাড়ি প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে ১২ লক্ষ পরিবারকে পাকাবাড়ি তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করে রাজ্য। তার জন্য ১৪০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ১২ লক্ষ পরিবারকে প্রথম কিস্তিতে ৭২০০ কোটি টাকা (পরিবারপিছু ৬০০০০ টাকা) ইতিমধ্যে দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাকি রয়েছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮০০ কোটি টাকা। সেটি এ বছরের জুনের মধ্যে ছাড়ার কথা।
আগামী অর্থবর্ষে আরও ১৬ লক্ষ পাকাবাড়ি তৈরি হবে, যার প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হবে এ বছরের ডিসেম্বরেই। ১৬ লক্ষ পরিবারকে পাকাবাড়ির প্রথম কিস্তি দিতে মোট খরচ পড়বে ৯৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এ বছর রাজ্যকে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে জুন এবং ডিসেম্বর মিলিয়ে মোট ব্যয় করতে হবে ১৬৪০০ কোটি টাকা। প্রশাসনের একাংশের মতে, আবাস প্রকল্পে কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়েরই ভাগ থাকে। কেন্দ্র টাকা পাঠানো বন্ধ রাখলেও আবাসের জন্য রাজ্যের যে পরিমাণ টাকা দেওয়ার কথা, তা রাজ্যের হাতেই রয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে, আবাস প্রকল্পের জন্য রাজ্যের ভাগের অর্থের সঙ্গে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৯৬০০ কোটি টাকা খরচের সুযোগ থাকবে।
আবাসের মতো কেন্দ্রের বরাদ্দ আটকে থাকার অভিযোগ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনাতেও। বাকি প্রকল্পগুলির মতো এই প্রকল্পটি নিয়েও কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের আলোচনা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট সংস্কার এবং নতুন সড়ক নির্মাণের উদ্দেশে রাজ্য সরকার নিজস্ব পথশ্রী প্রকল্পও চালু করেছে। পথশ্রী-১, পথশ্রী-২ এবং পথশ্রী-৩ মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৩৭০০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করেছে রাজ্য সরকার। আগামী দিনে এই প্রকল্পের জন্যও বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্য বাজেটে।
রাজ্য বাজেটে বাংলার বাড়ি বা পথশ্রীর জন্য নতুন করে বরাদ্দ ঘোষণা হলেও কর্মশ্রী প্রকল্পের জন্য নতুন বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়নি। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রাখার অভিযোগ তুলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করে রাজ্য। বাজেট পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রামীণ দরিদ্রদের ক্ষেত্রে রোজগার সুনিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্প কর্মশ্রী চালু করেছেন। এখনও পর্যন্ত ১২,৩৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্মশ্রী প্রকল্পের আওতায় ৬১ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলার বাড়ি এবং পথশ্রীর প্রকল্পের কাজে এই গ্রামীণ শ্রমিকদের ব্যবহার করতে পারে রাজ্য।
Share this content:
Post Comment