পুতুলকে ‘WHO’ থেকে অপসারণে গণস্বাক্ষর

  • অনলাইনে ব্যাপক সাড়া।
  • পুতুলের নিয়োগে প্রভাব খাটান হাসিনা।
  • পুতুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক।

লণ্ডন, ১৪ জানুয়ারি- পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কন্যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ‘হু’ থেকে অপসারণের পক্ষে একটি পিটিশন ক্যাম্পেইন চালু করা হয়েছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ২৪শ’ মানুষ সাইন করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পুতুলকে জরুরি অপসারণের দাবিতে খোলা পিটিশনটিতে।

এর আগে, গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্বের বৃহত্তম পিটিশন প্ল্যাটফর্ম চেঞ্জ ডট ওআরজি-তে পিটিশন ক্যাম্পেইনটি চালু করে মুক্ত, গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য কাজ করা মানবাধিকার কর্মীদের প্ল্যাটফর্ম ‘অ্যাক্ট নাও বাংলাদেশ’। পিটিশনের লিংক শেয়ার করে প্ল্যাটফর্মটি ফেসবুকে লিখেছে, দয়া করে স্বাক্ষর করুন এবং শেয়ার করুন! মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শাসনব্যবস্থার অধীনে নীতিমালা সমর্থন দেওয়ার কারণে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে হু থেকে অপসারণের দাবিতে আমাদের সাথে যোগ দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য নেতৃত্বে সততা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আমাদের আবেদনে স্বাক্ষর করুন।

পিটিশনের কারণ বর্ণনা করে বলা হয়েছে, আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালকের পদ থেকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে জরুরি পুনর্মূল্যায়ন এবং অপসারণের আহ্বান জানাচ্ছি। তার মা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নীতির প্রতি তার প্রকাশ্য সমর্থন নিয়ে গভীর উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এই অনুরোধ জানানো হচ্ছে। হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, যা হু এর নীতির সাথে স্বার্থের গভীর সংঘাত তৈরি করে।

পিটিশনের পটভূমিতে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ছিল। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহের সময়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর সরকারের সহিংস দমনের ফলে অসংখ্য আহত ও মৃত্যু ঘটে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। পিটিশনে কয়েকটি উদ্বেগ তুলে ধরে বলা হয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মায়ের দমনমূলক কর্মকা-ে সরাসরি সমর্থন দিয়েছেন। এই কর্মকা-ের প্রতি তার সোচ্চার সমর্থন হু-এর নিরপেক্ষতা এবং মানবতার নীতির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালক নিয়োগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রভাব খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুদক অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তার মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও শেখ রেহানার দেবর তারিক সিদ্দিকির পরিবারের দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা ছাড়াও তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিক, মেয়ে বুশরা সিদ্দিক, ভাতিজি সাবেক ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিকের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পুতুলের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালক বানাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রভাবিত করেছেন—এমন অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এসব অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তারিক সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যরা পরস্পর যোগসাজশে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি জমি আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিংসহ দেশে-বিদেশে নামে–বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার, ঘুষ–বাণিজ্যসহ দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে সংস্থাটি। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে লেখাপড়া করা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। তার মা শেখ হাসিনা তাকে অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক বাংলাদেশ জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব দেন। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলেরও তাকে সদস্য করা হয়।

২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের নয়া দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হন সায়মা ওয়াজেদ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দায়িত্ব নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দপ্তর ভারতের দিল্লিতে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পুতুল সেখানেই আছেন। আর গত ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে শেখ হাসিনাও আছেন দিল্লিতে।

Share this content:

Post Comment

অন্যান্য