গুলি করলে মরে একটা, বাকিডি যায় না স্যার, এটাই সবচে আতঙ্কের!
- রংপুরে বাতেনের নির্দেশেই ছাত্রদের উপর চালানো হয় গুলি।
ঢাকা, ১৩ আগস্ট- ইতিহাস যেন মনে রাখে, এই দেশে একটা অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান হয়েছিলো, একটা বিপ্লব হয়েছিলো। যেখানে কেউ বন্ধুর লাশ ফেলে চলে যায়নি। বরং বন্ধুর গুলি খাওয়া দেখে আরো তীব্র জেদে বুক পেতে দিয়ে বলেছিলো, বুকের মাঝে ভীষণ ঝড়, বুক পেতেছি, গুলি কর।
“গুলি করি। মরে একটা। একটাই যায়, স্যার। বাকিডি যায় না। এটাই স্যার সবচে বড় আতঙ্কের।” খুনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে একটি ভিডিও দেখিয়ে এভাবেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা ও সমস্যার কথা জানাচ্ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্য ইকবাল।
এই কথার মাধ্যমে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, বিক্ষোভকারীদের গুলি করেও রাজপথ থেকে বিতাড়িত করা যাচ্ছে না। একজন মারা গেলেও কিংবা অন্যজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে গেলেও সাহস নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে বাকিরা ।
কামাল যার কাছ থেকে আপডেট নিচ্ছিলেন তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদস্য ইকবাল। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্য সাবেক মন্ত্রীকে একটি ভিডিও দেখাচ্ছিলেন, যেখানে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলি করার চিত্র দেখা যাচ্ছিল।
৪৩ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে পুলিশ সদস্য ইকবালকে বলতে শোনা যায়, গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করে, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।
উৎখাত হওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে সেই ভিডিও দেখছিলেন। তিনি ভাবলেশহীন ছিলেন। গুলি ও নিহতের দৃশ্য দেখে তার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এ সময় তার পাশে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।
ভিডিওটি কবে, কোথায়, কে ধারণ করেছেন তা জানা না গেলেও ভিডিওটি যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের এ বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই।
জহির রায়হানের “আসছে ফাল্গুনে দ্বিগুন হবো” পড়ে বড় হওয়া প্রজন্ম যে তাঁর লেখাকেও অতিক্রম করে গেলো, ভাইরাল এই ভিডিওটি তার প্রমাণ।
রংপুরে বাতেনের নির্দেশেই ছাত্রদের উপর চালানো হয় গুলি
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় রংপুর পুলিশের শীর্ষ দুই কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান এবং রেঞ্জ ডিআইজি মো. আবদুল বাতেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলাদা প্রজ্ঞাপনে ওই দুই কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর তথ্য জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা ১-এর সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রজ্ঞাপন দুটিতে স্বাক্ষর করেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের সদস্য ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানকে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নম্বর আইন)-এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো।
রেঞ্জ ডিআইজি মো. আবদুল বাতেনকে অবসরে পাঠানোর প্রজ্ঞাপনেও একই তথ্য উল্লেখ করা হয়। জনস্বার্থে আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত ১৬ জুলাই বেরোবির সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ২২ বছর বয়সি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরে সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মামলায় প্রথমে ১৬ বছরের এক কিশোরকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ অবস্থায় চাপের মুখে পরে সাঈদের ওপর গুলি চালানো এএসআই আমির হোসেন ও পুলিশ কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়।
Share this content:
Post Comment