আসামের মুখ্যমন্ত্ৰীর আত্মনিৰ্ভর অসম প্রকল্প

  • ২৫,০৬৪ জনকে ৭৫ হাজার টাকা করে প্ৰথম কিস্তির সরকারি অনুদান।

গুয়াহাটি, আসাম: মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার হাতে চালু হয়েছে ‘মুখ্যমন্ত্ৰীর আত্মনিৰ্ভর অসম প্রকল্প’। অসমে উদ্যোগীকরণের বাতাবরণ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আজ সোমবার এই প্রকল্পের অধীনে বাছাইকৃত রাজ্যের বিভিন্ন প্ৰান্তের ২৫,০৬৪ জন সুবিধাভোগীকে প্ৰথম কিস্তির ৭৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। মূলত রাজ্যে নয়া উদ্যোগ গড়ে তুলতে প্রকারভেদে সুবিধাভোগীদের ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকার চেক দেবে সরকার।

আজ গুয়াহাটির খানাপাড়া ময়দানে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাছাইকৃত উদ্যোগীদের হাতে ৭৫ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাছাইকৃত সুবিধাভোগী যুবক-যুবতী যাঁরা ৭৫ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন, তাঁদের প্রথমে তিনদিনের প্ৰশিক্ষণ দেওয়া হবে।

প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আরও ২৫ হাজার টাকা প্ৰদান করা হবে। এই এক লক্ষ টাকা সুবিধাভোগীরা কী ভাবে ব্যবহার করছেন, তার ওপর ভিত্তি করে আরও এক লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।

টাকা ফেরত দেওয়া সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এক লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে না। এই টাকা সরকরি ভরতুকি, বাকি এক লক্ষ টাকা ব্যাংককে পরিশোধ করতে হবে। তব ওই এক লক্ষ টাকা তিন বছর পর প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দিতে হবে সুবিধাভোগীদের। এর পর সরকার ‘মুখ্যমন্ত্ৰীর আত্মনিৰ্ভর অসম প্রকল্প’-এর দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু করবে। এই প্রকল্পের অধীনে রাজ্য সরকার আরও ৭৫ হাজার যুবক-যুবতীকে অর্থ সাহায্য প্ৰদান করার চেষ্টা করবে, জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা মুখ্যমন্ত্রীর আত্মনির্ভর অসম অভিযান-এর অধীনে ২৫ হাজার শিল্পোদ্যোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫১০ কোটি টাকা ট্র্যান্সফার করেছি। এটি আমাদের নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উৎসাহিত করবে। তাঁরা তাঁদের উদ্যমী-শক্তিকে কাজে লাগাবেন, তা ভেবে আমি খুব আনন্দিত।’

ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ‘গত বছর ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্প আমরা চালু করে ইচ্ছুক প্রার্থীদের আবেদন জমা দিতে বলেছিলাম। এর জন্য একটি পোর্টাল আমরা চালু করেছিলাম। পোর্টালে উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসায়িক পরিকল্পনার পরামর্শ দিয়ে একে শিল্প অনুসারে পৃথক করা হয়েছিল। পোর্টালে লক্ষাধিক প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে আজ বাছাইকৃত ২৫ জন অনুদান পেয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, উদ্যোগটি সফলভাবে চালানো হলে সংশ্লিষ্টরা ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা’ (পিএম এমইউডিআরএ)-এর অধীনে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে, সেক্ষেত্রে একটি বিল্ট ইন ট্রেনিং মডিউলও রয়েছে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, রাজ্যে বেকারত্ব দূর করতে, নব-উদ্যোগীদের স্বাবলম্বী করতে এই আৰ্থিক অনুদান প্ৰদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার। বাছাইকৃত উদ্যোগীদের ৫০ শতাংশ ভরতুকি প্ৰদান করা হবে। এছাড়া কিছু নিয়ম পালনের মধ্য দিয়ে ২ লক্ষ, ৩ লক্ষ এবং ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে সুবিধাভোগীদের।

প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্ৰীর আত্মনিৰ্ভর অসম প্রকল্প-এর অধীনে কৃষি ও উদ্যানশস্য, মৎস্য পালন, হাঁস-মোরগ ও দুগ্ধ উৎপাদন, প্যাকেজিং ইত্যাদি উদ্যোগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগামী দু-বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে দু-লক্ষ যুবক-যুবতীকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

তবে এই প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের জন্য কয়েকটি শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলি যথাক্রমে সুবিধাভোগীদের অবশ্য অসমের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৪৫ বছর। শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে ন্যূনতম দশম শ্ৰেণি পাশ। ইতোপূর্বে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্ৰে কোনও গরমিল থাকা চলবে না। প্রকারভেদে উপাৰ্জন সৃষ্টিকারী কাৰ্যকলাপের জন্য আইটিআই, ডিপ্লোমা প্রভৃতি থাকতে হবে। একেকটি পরিবারে কেবলমাত্র একজন পাবেন এই সুবিধা। সরকারি কৰ্মচারী কিংবা পেনশন-ভোগী পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে না। এছাড়া ২০২৩ সালের ১ এপ্ৰিলের আগ এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে প্রার্থীকে রেজিস্ট্রিভুক্ত হবে হবে।

আজকের অনুষ্ঠানে দর্শকাসনে ছিলেন সুবিধাভোগী ও তাদের পরিবারবর্গ, বহু বিশিষ্ট নাগরিকগণ। মঞ্চে ছিলেন রাজ্য মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ যথাক্রমে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী বিমল বরা, অর্থমন্ত্ৰী অজন্তা নেওগ, বনমন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি, কৃষি ও পশুপালন মন্ত্রী অতুল বরা, জলসম্পদ সহ বহু দফতরের মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা, খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের মন্ত্রী রঞ্জিতকুমার দাস, কেশব মহন্ত, ডা. রণোজ পেগু, উর্খাও গৌরা ব্রহ্ম, সঞ্জয় কিষাণ, দুই সাংসদ দিলীপ শইকিয়া ও কামাখ্যা প্ৰসাদ তাসা। ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব ড. রবি কোটা, বিজেপির প্রদেশ সভাপতি ভবেশ কলিতা প্রমুখ।

Share this content:

Post Comment

অন্যান্য